বিএনপির সঙ্গে বিরোধ? এটা কোনো বিরোধই না : জামায়াত আমীর

| শুক্রবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

এক সময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে এখন নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, নেতাদের মধ্যে কখনো কখনো বাগযুদ্ধ চললেও বিষয়টিকে বিরোধ বলতে রাজি নন জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, রাজনীতিতে দুই দলের বিরোধযদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনের দিকে তাকান, তাহলে এটা (বিএনপিজামায়াত) কোনো বিরোধই না। সেখানে বাগযুদ্ধ তো হয়েছে আরও প্রচণ্ড। কিন্তু ইলেকশন হয়ে যাওয়ার পরে হ্যান্ডশেক। একদল চলে গেছে সরকারে, আরেক দল বসে গেছে বিরোধী দলে। এখন তারা মিলেমিশে দেশ চালাবে এটাই স্বাভাবিক। খবর বিডিনিউজের।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে হোটেল ওয়েস্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জামায়াতের আমীর। এই সফরে লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেছেন, যা নিয়ে দেশের রাজনীতির অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। শফিকুর রহমান বলেছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে রাজনীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে কী আলোচনা হয়েছে, তা তিনি খোলাসা করেননি। আগামী নির্বাচনে জামায়াত আবার বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধবে কি না, সে প্রশ্নও করা হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনে। তবে ডা. শফিকুর রহমান উত্তর দিয়েছেন কূটনীতির ভাষায়। বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে অনেক কিছুই হতে পারে।

জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গত ১৩ এপ্রিল লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় যান। গত সাড়ে তিন মাস ধরে সেখানেই আছেন তারেকের মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জামায়াতের আমীর বলেন, আমাদেরকে অতি ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল উনাকে (খালেদা জিয়া) দেখা। কিন্তু যেহেতু উনি অবস্থান করছেন তার বড় সন্তান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের (তারেক রহমান) বাসায়, সেই কারণে তিনিও থাকবেন, এটা স্বাভাবিকতিনি ছিলেন।

ওই বৈঠকে যে রাজনীতির আলাপও হয়েছে, সে কথা স্বীকার করে শফিকুর রহমান বলেন, দুইজন বাংলাদেশি মানুষ চা খাইতে গেলে একজনের সাথে আরেকজনের কোনো পরিচয় নাই শুরু করে দেয় আমাদের রাজনীতির কথা। আর আমরা দুই দলের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ এক জায়গায় বসব আর রাজনীতির কোনো কথা হবে না এটা কি বাস্তব? এটা বাস্তব নাকথা তো হয়েছে। তবে আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলেনি। কখন নির্বাচন হবে, কীভাবে নির্বাচন হবে, (আওয়ামী লীগের) বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে হবে না হবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণ আলোচনা করেছি। ওইটা ডিসাইসিভ কোনো ডিসকাশন ছিল না।

বিএনপির সঙ্গে বিরোধ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির বলেন, রাজনীতিতে আমরা চাই মতপার্থক্য থাকুক। না থাকলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন মতপার্থক্য। কিন্তু এও আমরা প্রত্যাশা করি যে, এটা যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়, ওটা পার্থক্য পর্যন্ত থাকুক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা অনেক সময়ে বিষয়গুলো খেয়াল করেন না বা করি না। এটা করতে হবে, যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে এই ভালবাসাশ্রদ্ধার জায়গায়, মিউচুয়াল রেসপেক্টের জায়গায় আমাদের আসতে হবে। আমার ওপিনিয়ন আমি দেব, কিন্তু এটা বলতে পারব না যে এটাই করতে হবে। আমি ওপিনিয়ন দিয়ে বলব যে, আমি মনে করি এটা করলে আমার দেশ ও জাতির উপকার হবে। আর এটা আমি করতে দেব না…. যে যাই চাক, এটা রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে জামায়াত আমিরের এটাই ছিল প্রথম সাক্ষাৎ। আর এই দেখা করার কারণও সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের ভিজিটের মেইন পারপাসটা ছিল একজন সম্মানিত অসুস্থ সহকর্মীকে দেখা; এটা আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। আমরা শুধু এটাই পালন করেছি, এর বেশি কিছু না।

আগামী নির্বাচনে বিএনপিজামায়াত জোটবদ্ধ হবে কিনা, সেই প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে রাখেন একজন সাংবাদিক। জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থ বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলো কোনো উত্তম সিদ্ধান্ত যে কোনো সময় নিতেই পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে কোনো কোনো দলের পক্ষে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, আমরা কোনো রাজনৈতিক জোট করব না। আমরা এখানেই আপাতত থাকি; আর অপেক্ষা করতে থাকি।

চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়া এখন কেমন আছেন, সেই প্রশ্ন শফিকুর রহমানের কাছে রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, ম্যাডামের ব্যাপারে অনুধাবন করেছি যে, তিনি মানসকিভাবে একটু ভালো আছেন। কারণ দীর্ঘদিন পরে তিনি আপনজনকে পাশে পেয়েছেন, তাদের সঙ্গে থাকতে পারছেন।

খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন, সেই আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জামায়াত আমীর বলেন, না, এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী মাসে হতে পারে, আমরা অনুমান করেছি। সুনির্দিষ্ট কিছু উনি বলেননি। আর তারেক সাহেবের পক্ষ থেকে ওরকম কিছু আসেনিকবে আসতে পারেন তিনি দেশেসেই আলোচনা আমরাও তুলিনি, উনিও কিছু বলেননি। তিনি তার দেশে আসবেন অসুবিধা কি? অসুবিধা তো নাই। এই দেশ তো তার, আমারআপনারসবার।

বিএনপি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের বিচারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি যে, কিছু বিচার হতে হবে দৃশ্যমান, যাতে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয় বিচারের এই ধারাটা অব্যাহত থাকবে। আপনি (প্রশ্নকর্তা) বলেছেন যে, পরবর্তী সরকার (বিচার চালিয়ে নেবে কি না) এই ব্যাপারে সন্দেহ আছে কিনা। আমরা আস্থা রাখতে চাই এবং আমরা মনে করি যে, সরকারে যারা আসবে, তারা জনগণের সমর্থন নিয়ে আসবে। জনগণের পালস বুঝে আসবে এবং জনগণও তাদের গ্রহণ করবে। আমরা বিচারকে বাধ্য করে দিতে পারি না। আমরা বলে দিতে পারি না যে, অত তারিখের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে এটা হবে বিচারের ওপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ, অহেতুক হস্তক্ষেপ। এই অধিকার আমাদের নেই। কিন্তু আমরা দাবি করতে পারি, আমরা মজলুম জনগণ হিসেবে দাবি করতে পারি, দাবির জায়গা আমাদের খোলা। এই দাবি সবাই করে, সকল যুগে হয়েছে। এই দাবি (ফ্যাসিস্টদের বিচার) আমাদেরও থাকবে।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আপনি জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা। অবশ্যই হয়েছে। আপনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তারা জানতে চেয়েছে কিনা। হ্যাঁ জানতে চেয়েছে। সবাই চায়নি, দুইএকটা জায়গায় তারা চেয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি, আমাদের দেশে এই কেবলমাত্র একটা গণহত্যা হয়ে গেছে, শহীদের মাশিশুরা এখনো কান্নাকাটি করছে, স্ত্রীরা কান্নাকাটি করছে। আহতরা কেউ কেউ এখনো হাসপাতালের বেডে আছে। আমরা জাতি হিসেবে তাদেরকে আমাদের যে করণীয়, এটাও পুরোপুরি করে উঠতে পারিনি। গোটা জাতি ট্রমাটাইজড। কারণ জুলাইআগস্ট ওই সময়টাতে সরকার কার্যত গোটা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা পক্ষের ছিল না। এটা ছিল জনতার আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ তিনটা নির্বাচনের সুযোগ পেয়েছিল এবং তারা নির্বাচনের জান কবজ করেছে মন্তব্য করে জামায়াত আমীর বলেন, সেই রকম একটা দলকে দেশের জনগণ গ্রহণ করবে কিনা তা দেখতে হবে। এটা বলার পর তারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) আর কিছু বলেনি।

আওয়ামী লীগের সময় আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ায় গত কয়েকটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না জামায়াতের। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, নিবন্ধন কেন পাব না? নিবন্ধন তো অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইনশাল্লাহ আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ফিরে পাব। আমরা পাব ইনশাল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেয়াজুদ্দিন বাজারে মার্কেটে ও পতেঙ্গায় কার্টনের গুদামে আগুন
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী উদ্ধারে অভিযান চলছে : সেনা সদর