স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন কম। অন্যদিকে অস্থাবর সম্পদ থাকলেও দাবি করেছেন ‘নেই’। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন। সম্পদ বিবরণীতে তিনি মোট ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ২৬২ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। পাশাপাশি তার নামে ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়েই স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে বিপুল পরিমাণ উক্ত সম্পদ গড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লিয়াকত আলী। এ ঘটনায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–২ এর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল আলম আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গন্ডামারা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লিয়াকত আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এতে তিনি ২ কোটি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাই করলে দেখা যায়, তার নামে ১৬টি দলিল মূলে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৯ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি ২৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৯ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। জেসমিন আক্তার সম্পদ বিবরণীতে কোন অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেয়নি উল্লেখ করে বলা হয়, অথচ তার নামে ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকার একটি প্রাইভেট কার, বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বাঁশখালী শাখার হিসাব নম্বরে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৬ টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পাঁচলাইশ শাখার পৃথক পৃথক হিসাব নম্বরে যথাক্রমে ১ লাখ ৪ হাজার ৬১৫ টাকা ও ৩৭ হাজার ২৯৩ টাকা, একই ব্যাংকের বাঁশখালী শাখার পৃথক দুটি হিসাব নম্বরে যথাক্রমে ৫১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮ টাকা ও ৪৪১ টাকা এবং ৯ লাখ টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে। সবমিলে জেসমিন আক্তারের নামে ৮০ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৩ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৬ লাখ ২৬ হাজার ২৬২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ (৮০ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৩ টাকার অস্থাবর ও ২৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৯ টাকার স্থাবর সম্পদ) অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। যা দুদক আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে আরো বলা হয়, জেসমিন আকতারের নামে ব্যয়সহ মোট ৩ কোটি ৯২ লাখ ৫১ হাজার ২৬২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকার। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ পাওয়া গেছে ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬২ টাকার। অর্থাৎ জেসমিন আক্তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৮৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬২ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজাহারে চেয়াম্যান মোহাম্মদ লিয়াকত আলীর বিষয়ে বলা হয়েছে– চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি স্ত্রী জেসমিন আক্তারের নামে সম্পদ গড়েছেন। যা দন্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।