বিইআরসির নির্দেশনা উপেক্ষিত বিপিসিতে

তিন বিতরণ কোম্পানিতে বকেয়া ৯ কোটি টাকা আগের মূল্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত ।। এলপিজির দাম

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৭ জুলাই, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

সরকারিভাবে জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্য মানছে না আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকারী তিন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বিইআরসির নির্দেশিত সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য ৫৯১ টাকা মানছেন না। প্রতিষ্ঠান তিনটি বিইআরসি’র জারিকৃত এলপিজি মূল্য কাঠামো সম্পর্কে অবগত না হওয়ার অযুহাত দেখিয়ে এলপিজি উৎপাদনকারী বিপিসির আরেক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের (এলপিজিএল) প্রায় ৯ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করছেন না। তবে সোমবার বিপিসির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব বকেয়া পূর্বের বিপিসি নির্ধারিত মূল্যে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল তারিখের ২৮.০০.০০০০.০২৬.৩৫.০০১.১৮.৩২ পত্রসূত্রে অর্পিত ক্ষমতাবলে ভোক্তা পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির মূল্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে বিপিসি। গত বছরের ২১ জুলাই থেকে ওই মূল্য কার্যকর হয়। এরমধ্যে প্রতি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির জন্য রিফাইনারি পাবেন ৩৫৭ টাকা ৮৯ পয়সা, এলপিজিএল মার্জিন হিসেবে পাবেন সিলিন্ডার প্রতি ৭৫ টাকা, সিলিন্ডার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য ১২ টাকা, সিলিন্ডারের অবচয় হিসেবে ২০ টাকা, ভ্যাট ধরা হয়েছে ৩৫ টাকা ১ পয়সা, তেল বিপণন কোম্পানির মার্জিন ধরা হয়েছে ২৩ টাকা, সমান পরিবহন ভাড়া ধরা হয়েছে ৫২ টাকা ১০ পয়সা, ডিলাদের স্থানীয় পরিবহন খরচ ১২ টাকা এবং ডিলার পর্যায়ে অপারেশন ও কমিশন মিলে ১৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট তারিখে উচ্চ আদালতের এক আদেশ ও বিইআরসি সরকারি-বেসরকারি এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করার পদক্ষেপ নেয়। এ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএলের এলপিজির দাম নির্ধারণের জন্য চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বিইআরসি। ধারাবাহিকতায় গত ১২ এপ্রিল থেকে থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির মূল্য ৫৯১ টাকা নির্ধারণ করে বিইআরসি। এরমধ্যে এলপিজির জন্য রিফাইনারি পাবেন ৩৫৭ টাকা ৮৯ পয়সা, এলপিজি মজুদ, বোতলজাত, সিলিন্ডার মেরামত, অবচয়, মার্জিনসহ সবমিলিয়ে এলপিজিএল পাবেন ১১৭ টাকা ৭৫ পয়সা, ভ্যাট ৩৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ডিস্ট্রিবিউটর, বিপণন ও পরিবহন চার্জসহ বিপণন কোম্পানিগুলো সাকুল্যে পাবেন ৫০ টাকা এবং ডিলার রিটেলাররা চার্জ ও কমিশন হিসেবে সাকুল্যে পাবেন ৩০ টাকা। বিপিসির তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান আগে প্রতি সিলিন্ডারে মার্জিন ও সমান পরিবহন ভাড়াসহ ৭৫ টাকা ১০ পয়সা পেয়ে আসলেও বিইআরসির নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী বর্তমানে পাচ্ছেন ৫০ টাকা।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি বিইআরসির এলপিজি মূল্য কাঠামো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। এজন্য কোম্পানিগুলো বিইআরসির মূল্য কাঠামো অনুযায়ী সরবরাহকৃত এলপিজি গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকে। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ১৪ জুলাই বিপিসিকে চিঠি দেয় এলপিজিএল। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসির মুল্যকাঠামোজনিত কারণে গত ১ জুলাই পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানে এলপিজিএলের প্রায় ৯ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে। তন্মধ্যে পদ্মা অয়েলের ২ কোটি ৬৩ লক্ষ, মেঘনার ৩ কোটি ৩৬ লক্ষ এবং যমুনার ২ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে। এজন্য এলপিজিএল রিফাইনারি থেকে গ্যাস নেওয়ার বকেয়া টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না বলে চিঠিতে বিপিসিকে অবগত করেন। একই দিন সমস্যাটি সমাধানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দেয় বিপিসি। চিঠিতে এলপিজির মূল্য পূর্বের ন্যায় বিপিসি কর্তৃক পুনঃনির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
এদিকে গত সোমবার বিপিসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভায় আগের মূল্যেই (বিপিসি নির্ধারিত মূল্যে) এলপিজিএলের সরবরাহতকৃত গ্যাসের মূল্য পরিশোধের জন্য তিন বিপণন কোম্পানিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘তিন বিপণন কোম্পানিকে এলপিজি সরবরাহের বিল হিসেবে ১ জুলাই পর্যন্ত বকেয়া পড়া প্রায় ৯ কোটি টাকা আগের নিয়মে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে ভার্চুয়াল সভায়। তবে বিইআরসির নির্ধারিত দাম প্রতিপালনের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।’
অন্যদিকে তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানে সরকারি এলপি গ্যাসের সাড়ে ১২ কেজির মূল্য ৫৯১ টাকা মানা না হলেও এলপিজি বোতলজাতকারী বিপিসির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এলপিজিএলের গেইটে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে ভোক্তা পর্যায়ে ৫৯১ টাকা করে বিক্রি হয়ে আসছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এলপিজিএলের গেইটে প্রত্যেক সিলিন্ডার ৫৯১ টাকা হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হলেও তিন বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরবরাহকৃত এলপিজি কত টাকা করে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয়ে আসছে।
এ ব্যাপারে এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু হানিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে এ বিষয়ে জানতে বিপিসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের ঈদগাঁও নতুন উপজেলা
পরবর্তী নিবন্ধপদক তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র জাপান