বিইআরসি ফিরিয়ে দেওয়ার পর ফের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব

| শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিতরণ কোম্পানিগুলো জানুয়ারির শুরুতে যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তা ‘বিধি বহির্ভূত’ ছিল জানিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন- বিইআরসি। এখন নতুন করে আবার আবেদন করতে শুরু করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো, যদিও এই মুহূর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির দৃশ্যমান কোনো কারণ দেখছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা কয়েকটা বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে আবেদন পেয়েছিলাম। বিইআরসি আইন ও প্রবিধান অনুযায়ী এগুলো পূর্ণাঙ্গ আবেদন নয় বিধায় আমরা তা গ্রহণ করিনি। নিয়ম অনুযায়ী যথাযথভাবে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছি। পরে দুই থেকে তিনটা কোম্পানি আবারও আবেদন পাঠিয়েছে। নতুন আবেদনে সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র দিতে হবে, ফি দিতে হবে, অডিট রিপোর্ট দিতে হবে। সর্বমোট ৮/১০টা ডকুমেন্ট দিতে হবে।’ খবর বিডিনিউজের।
গ্যাস খাতে সরকারি কোম্পানি রয়েছে সাতটি। এর ছয়টি বিতরণ কোম্পানি এবং একটি সঞ্চালন কোম্পানি। সঞ্চালন কোম্পানির কাছ থেকে যে দামে গ্যাস পাওয়া যায়, এর সঙ্গে কোম্পানির পরিচালন ব্যয়সহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক ব্যয় সমন্বয় করে খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ অবস্থায় গ্যাসের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির আগেই কেন বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিইআরসির।
কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে গ্যাসের পাইকারি মূল্য বাড়ানোরও কোনো যৌক্তিকতা নেই। খুচরা মূল্য বৃদ্ধি তো অনেক দূরের কথা। তারপরেও বিতরণ কোম্পানিগুলো কেন মূল্য বৃদ্ধির এমন প্রস্তাব নিয়ে এল, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছি। দেখা যাক পরে কী হয়।’
গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী, বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের খুচরা মূল্য ১১৭ শতাংশ বা দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসিতে কাছে পাঠিয়েছিল। তাতে রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই হারে আবাসিকের প্রিপেইড মিটার, শিল্প, সিএনজি, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল বিতরণ কোম্পানিগুলোর। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দাম কত বাড়ানোর প্রস্তাব আসছে তা নিয়ে আমরা চিন্তা করছি না। তাদের প্রস্তাব কারিগরি কমিটি যাচাই করে দেখবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমরা সব কোম্পানির কাছ থেকে আবেদন পেলেই কেবল এ নিয়ে ভাবব।’
বিতরণ সংস্থা পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মান্নান পাটোয়ারি জানান, তারা শুরুতে একবার আবেদন করার পর তা ‘অপূর্ণাঙ্গ’ থাকায় আরেকটি আবেদন করেছেন। এবার ‘সব ধরনের কাগজপত্র ও তথ্য’ জমা দেওয়া হয়েছে। কেন দাম বাড়াতে চান- জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সেটা আবেদনে আছে। আমি এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না।”
বিইআরসির একজন সদস্য বলেন, ‘গত দুই বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। সিস্টেমে ৩০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিজস্ব গ্যাস, যেটার দাম ওঠানামা করছে না। দ্বিতীয়ত ৬০০ মিলিয়ন গ্যাস আছে এলএনজি থেকে, এটা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির কারণে দাম ওঠানামা করছে না। আগামী ১০ বছরেও দাম ওঠানামা করবে না। বাকি ১৫০ মিলিয়ন গ্যাসের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা ওঠানামা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ১৫০ মিলিয়নের দাম যদি ৫ টাকা করেও উঠানামা করে তাতে কী এমন আসে যায়? এর প্রভাব বাজারে কতটা পড়বে? আপনারাই অংকটা করে দেখেন।’
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জুন গ্যাসের গড়মূল্য ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা হয়। আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয় সে সময়। অর্থাৎ, রান্নার গ্যাসের জন্য চুলাভিত্তিক গ্রাহকদের প্রতি মাসে ২৩ শতাংশ এবং মিটারভিত্তিক গ্রাহকদের ৩৮ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ বাড়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাইজভাণ্ডার দরবারে দারুল ইরফান তাসাউফ সংলাপ
পরবর্তী নিবন্ধমোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী