বাড়তি দামে লবণ শিল্পে প্রাণ

চাষিদের মুখে খুশির ঝিলিক

টেকনাফ প্রতিনিধি | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফসহ কক্সবাজার ও বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকায় পুরোদমে এগিয়ে চলছে লবণ চাষ। ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে উৎপাদিত লবণ পুরো দেশের চাহিদা মেটায়। সরকার চলতি ২০২১-২০২২ মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রায় ৩৭ হাজার ৬শ জন প্রান্তিক লবণ চাষী মাঠে নেমেছেন। গত বুধবার ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সাড়ে ১৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিসিক কক্সবাজার অফিসের পরিদর্শক লিয়াকত আলী। তিনি আরো জানান, এখনো চার সপ্তাহ সময় পাবেন চাষীরা। যদি আবহাওয়াজনিত সমস্যা না হয় তাহলে প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ টন হিসেবে চার সপ্তাহে আরো প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হবে। যা যুক্ত হয়ে দেশের বার্ষিক চাহিদা পূরণ করবে ইনশা আল্লাহ।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর লবণ উৎপাদনের জমি বেড়েছে ১০ হাজার একর। তীব্র গরমে লবণ উৎপাদনে মাঠে চাষ করছেন টেকনাফ, মহেশখালী, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া উপকূলের প্রান্তিক লবণ চাষীরা। গত কয়েক বছরের টানা লোকসান কাটিয়ে চলতি মৌসুমের শুরুতে লবণের দাম বাড়তি থাকায় প্রাণ ফিরেছে লবণ শিল্পে।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের চাষী দিল মোহাম্মদ বলেন, এবার লবণ চাষীরা বেশ উজ্জীবিত, কারণ উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন তারা। গত মৌসুমে এ সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করে চাষীরা যেখানে লোকসান গুণেছেন ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, সেখানে চলতি মৌসুমে সব খরচ মিটিয়ে তাদের পকেটে আসছে প্রতি মণে ১০০-১২০ টাকা। মাঠ পর্যায়ে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকায়।
টেকনাফের নয়াপাড়ার মোহাম্মদ আলম বলেন, এবার ভিন্ন চিত্র। লবণের মূল্য উৎপাদন খরচের উপরে থাকায় সবাই খুশি। চাষীর মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। একই কারণে এবার লবণ চাষের পরিধি যেমন বাড়ছে তেমনি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রত্যাশা করছেন বিসিক কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের (বিসিক) সহকারী নিয়ন্ত্রক মো. মনজুর আলম বলেন, চলতি মৌসুমে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। মৌসুম অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
জানা গেছে, ২০২০-২১ মৌসুমে ২২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদার বিপরীতে ৫৪ হাজার ৬৫৪ একর লবণ মাঠে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। এর আগের বছরের প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন মজুদ ছিল তাই লবণের সংকট তৈরি হয়নি দেশে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড মৌলভী পাড়া এলাকার লবণ চাষী হাজী ফজল আহমেদ জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি মণ ৩৮০ টাকা করে (অপরিশোধিত) সাদা লবণ পাইকারি বিক্রি করেছেন। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মণে লাভ হয়েছে ৮০-১০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে লবণের দাম নিম্নমুখী। এখন একি লবণ মাঠে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় উপকূলে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন চাষীরা। এর ফলে লবণ চাষে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে। কক্সবাজার উপকূলজুড়ে উৎপাদন হচ্ছে লবণ। বাঁশখালী অংশে আংশিক লবণ উৎপাদন হয়।
কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন প্রকল্পের (বিসিক) উপ মহা ব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, এবার শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেশে লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর লবণ আমদানি বন্ধে সরকার বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষী সমিতির সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য শফিক মিয়া জানান, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব দপ্তরে কক্সবাজারের লবণ চাষীদের সমস্যার কথা জানানো
হয়েছে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ হওয়ায় চাষীরা এবার লবণের উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন। তাই লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরেছে। তবে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী লোকজন এখনো ঘাপটি মেরে আছে লবণের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আমদানি করার।
কক্সবাজার লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের চাষীরা উৎপাদন করছেন সারাদেশের চাহিদা। কয়েক লক্ষ পরিবার লবণ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং লবণ চাষী সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর বিদেশ থেকে লবণ এনে দেশের লবণ শিল্পকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। যার খেসারত দিতে হয় লবণ চাষীদের। যে কারণে লবণ উৎপাদনে চাষীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তবে চলতি বছর লবণ উৎপাদনের পরিধি বেড়েছে। বেড়েছে লবণ চাষীর সংখ্যাও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদে বাড়তি যাত্রী পরিবহনে রেলের আগাম প্রস্তুতি
পরবর্তী নিবন্ধওমিক্রনের চেয়ে বেশি সংক্রামক এক্সই ভ্যারিয়েন্ট