চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। হাসপাতালটির মূল ভবনটি গড়ে তোলা হবে দশ তলা ফাউন্ডেশনে (ভিত্তিতে)। প্রাথমিক পর্যায়ে ৬ তলা ভবনেই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করা হবে। প্রয়োজন হলে পরবর্তীতে ভবনটি উপরের দিকে আরো বর্ধিত করার সুযোগ থাকছে। এই পরিকল্পনাতেই হাসপাতালের মূল ভবনের নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্থাপত্য অধিদপ্তর এ নকশা প্রণয়নের কাজ করছে জানিয়ে প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, নকশা হাতে পেলে আমরা ভূমির সয়েল টেস্টটা করতে পারবো। একই সাথে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলবে। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে হাসপাতালটির জন্য চিহ্নিত জমি (বাকলিয়ায় মৌজায়) অধিগ্রহণে জেলাপ্রশাসনকে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এখন স্থাপত্য বিভাগে নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হলে চিহ্নিত ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। মূল ভবনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় রাস্তার লে-আউট ও ল্যান্ড স্কেপিং রেখে সাব স্টেশন ভবন এবং কিচেন ভবনও নির্মাণ হবে হাসপাতাল এলাকায়। তবে জায়গা স্বল্পতায় ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের ডরমেটরি প্রাথমিকভাবে নাও হতে পারে। হাসপাতাল এলাকায় আলাদাভাবে এসব ডরমেটরি নির্মাণ করতে গেলে অন্তত তিন একর জমি প্রয়োজন বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু হাসপাতালটি স্থাপনের লক্ষ্যে চিহ্নিত স্থানে ভূমি পাওয়া গেছে দেড় একরেরও কম (প্রায় দেড় একর)। যার কারণে অপরিহার্য স্থাপনা চিহ্নিত করে প্রস্তাবনা পাঠাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়কে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এর প্রেক্ষিতে এসব ডরমেটরি সম্ভব হলে বহুতল ভবনের উপরের কয়েকটি তলায় করার প্রস্তাব দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। বিকল্প হিসেবে প্রাথমিকভাবে ডরমেটরি বাদ দিয়ে হলেও মূল হাসপাতাল ভবনসহ অপরিহার্য স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাবনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরো জমি অধিগ্রহণ সাপেক্ষে এসব ডরমেটরি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলেও অভিমত দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রদত্ত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এখন নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ।
প্রসঙ্গত, গতবছরের ৬ নভেম্বর নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে বিশেষায়িত হাসপাতালটি স্থাপনে চিহ্নিত জমি ব্যবহারের (অধিগ্রহণের) ক্ষেত্রে অনাপত্তির কথা জানায় সিডিএ। যদিও প্রত্যাশিত দুই একরের স্থলে কাটছাট করে প্রায় দেড় একর জমিতে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। সিডিএ’র ছাড়পত্র পাওয়ার পর বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগকে অবহিত করে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর প্রেক্ষিতে ছাড়পত্র পাওয়া ওই জমিতে বিশেষায়িত হাসপাতালটি স্থাপনে মতামত চেয়ে স্থাপত্য বিভাগের কাছে চিঠি দেয় গণপূর্ত বিভাগ। জমির পরিমাণ কম হলেও হাসপাতালটি নির্মাণে স্থাপত্য বিভাগের অনাপত্তি পাওয়া গেছে বলে ওই সময় নিশ্চিত করেন গণপূর্ত বিভাগ-১ (চট্টগ্রাম) এর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান।
আর স্থাপত্য বিভাগের অনাপত্তি পাওয়ার পর চিহ্নিত জমি অধিগ্রহণে জেলাপ্রশাসনকে চিঠি দেয় সিভিল সার্জন কার্যালয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল স্থাপনে ২০১৭ সালের ১৪ মে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগ। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক অপারেশন প্ল্যানের আওতায় এ হাসপাতাল স্থাপনে ৩০ কোটি (৩০০০ লাখ) টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুবিভাগ কর্তৃক অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক অনুমোদনের পর প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের জন্য চট্টগ্রামের জেলাপ্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়ের নির্মাণ অধিশাখা। নির্মাণ অধিশাখার তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের স্বাক্ষরে ওই বছরের (২০১৭ সালের) ১০ সেপ্টেম্বর চিঠিটি ইস্যু করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদনের দেড় বছরেও বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি স্থাপনে জমির সংস্থান করা যায়নি চট্টগ্রামে। পরবর্তীতে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ২০১৮ সালের শেষ দিকে বাকলিয়া মৌজার (নতুন ব্রিজের পার্শ্ববর্তী) একটি জায়গা চিহ্নিত করে জেলাপ্রশাসন। ওই জায়গায় মোট দুই একর খাস জমি হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত করা হয়। যদিও সেখানে অল্প পরিমাণ ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও ছিল। তবে তা খুবই সামান্য পরিমাণ। জায়গা চিহ্নিত করার পর বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানায় সিভিল সার্জন কার্যালয়। পরে এ জায়গায় হাসপাতালটি স্থাপনে সম্মতিও দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পাওয়ার পর অনুমোদন পেতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দ্বারস্থ হয় সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর আগে জেলাপ্রশাসন-মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালিতেও অনেকটা সময় কেটে যায়। তবে ওই জায়গায় হাসপাতাল স্থাপনে প্রথম দফায় অনুমোদন দেয়নি সিডিএ।
হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত নগরীর বাকলিয়া মৌজার (নতুন ব্রিজের পাশ্ববর্তী) দুই একর খাস জমির মধ্যে কিছু অংশ রাস্তার অ্যালাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত রয়েছে বলে জানিয়েছিল সিডিএ। যার কারণে ওই জায়গায় হাসপাতাল স্থাপনে অনুমোদন দেয়া হয়নি। এ নিয়ে গতবছরের ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় ‘জমি পেলেও মেলেনি সিডিএ’র অনুমোদন, ঝুলে গেলো ফের/ ২’শ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্প’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের দিনই (২৫ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিয়ে সিডিএ’র নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী’র সাথে আলোচনা করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। চিহ্নিত জায়গায় নির্ধারিত রাস্তা বাদ দিয়ে বাকি জমিতে হাসপাতালটি স্থাপনের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয় বলে জানান সিভিল সার্জন। নির্ধারিত অ্যালাইনমেন্ট বাদ দিলে প্রস্তাবিত জায়গার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় একরে। জমির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও (দুই একরের স্থলে দেড় একর) ওই পরিমাণ জমিতে হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন সিভিল সার্জন। জমির পরিমাণ কম হলেও তাতে হাসপাতাল স্থাপনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মৌখিক সম্মতি পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী। এ নিয়ে গত বছরের (২০১৯ সালের) ১ অক্টোবর ‘২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রকল্প/কম জমিতেও হাসপাতাল স্থাপনে রাজি মন্ত্রণালয়’ শিরোনামে দৈনিক আজাদীর শেষ পাতায় আরো একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গত ৬ নভেম্বর নগর পরিকল্পনাবিদ-২ মো. আবু ঈসা আনছারী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে চিহ্নিত জমি ব্যবহারের (অধিগ্রহণের) ক্ষেত্রে অনাপত্তির কথা জানায় সিডিএ। যদিও প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ বাদ দিয়ে অধিগ্রহণের পক্ষে ছাড়পত্র দেয় সংস্থাটি। সিডিএ’র অনাপত্তি সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়- ‘প্রস্তাবিত সাইটটি যেহেতু চউক বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ কানেক্টিং রোডের অধিগ্রহণকৃত অ্যালাইনমেন্ট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেহেতু উভয় সংস্থার সাথে সমন্বয়পূর্বক এলাইনমেন্টের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা বাদ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এই ছাড়পত্র শুধু ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রযোজ্য জানিয়ে পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ পূর্বক চউক হতে বিধি মোতাবেক অনুমোদন নিতে হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে সরকারি সংস্থাটি (সিডিএ)।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। আর বাস্তবায়নের সময়কাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করতে হবে।