বালু খেকোদের অত্যাচারে সাগরে মাছ ধরতে পারছেন না জেলেরা

সীতাকুণ্ড ইউএনওকে অভিযোগ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপের বালু খেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলে সমপ্রদায়। গত দুইমাস যাবৎ নানাভাবে জেলেদের হয়রানি করে আসছে বালু উত্তোলনকারী দল। তারা কোনো সময় জেলেদের জাল ছিঁড়ে ফেলছে, কখনো মারধর করছে বলে গতকাল শুক্রবার সকালে বগাচতর জেলেপাড়ার লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।
জেলেরা অভিযোগে জানান, প্রথমদিকে সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে বালুর ড্রেজার থেকে তাদের গালাগালি, হুমকি-ধমকিসহ বিভিন্নভাবে মাছ ধরার কাজে বাধা দেয়া হতো। পরবর্তীতে আরো হিংস্র হয়ে ওঠে বালু খেকোরা। জেলেদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। এসব নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও এতোদিন চুপ ছিলো জেলে সমপ্রদায়। কিন্তু গত ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বালু উত্তোলনকারী একটি ড্রেজার জেলেদের জাল নষ্ট করে ফেলে। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে জেলেরা কয়েকজন মিলে জাল নষ্ট করার প্রতিবাদ করলে জেলে অভিচরন জলদাস, পলাশ জলদাস, দিনাশ জলদাস, দিলীপ জলদাস, মৃদুল জলদাস ও হৃদয় জলদাসকে ব্যাপক মারধর করে ড্রেজারের লোকজন। এসময় পলাশ জলদাসকে পায়ে কুপিয়ে জখম করে বালু খেকোরা। শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হননি বালু খেকোরা। গুরুতর আহত অবস্থায় চার জেলেকে সাগরে ফেলে দেয়। পরে জেলেদের ২টি নৌকা ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা লুট করে চলে যায়। এসময় অন্য জেলেরা গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে আনে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে সবশেষে উপজেলা পরিষদে হাজির হতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান জেলেরা।
বগাচতর জেলে পাড়ার পলাশ জলদাস, মৃদুল জলদাস, বাসন্তি দেবী, হিমাংশু জলদাস বলেন, ১০টিরও অধিক ড্রেজার দিয়ে সাগর থেকে নিয়মিত বালু তোলা হচ্ছে। ড্রেজারগুলো আমাদের শতশত জাল নষ্ট করছে, প্রতিবাদ করলে মারধর, নৌকা ভেঙে দেওয়া ও নৌকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা সীমাহীন অত্যাচারের শিকার হচ্ছি। জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
জেলে পাড়ার সর্দার ক্ষুদিরাম জলদাস বলেন, সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর জেলেপাড়ায় দীর্ঘকাল ধরে আমরা প্রায় ১০৭ পরিবার বসবাস করে আসছি। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় আমাদের। কিন্তুু বর্তমানে সাগরে মাছ ধরতে গেলে আমাদের মারধর করা হচ্ছে এবং হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারীদের কাছে আমরা ছয়শ’ মানুষ এখন জিম্মি হয়ে আছি। সমুদ্রে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই, আমরা কীভাবে জীবন চালাবো।
ভুক্তভোগী সুধন জলদাস বলেন, আমরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছি না। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, তিনি আমাদের পাশে থাকবেন বলে আশা করি।
এসব বিষয়ে সৈয়দপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ বলেন, জেলেদেরকে সরাসরি ও মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি জেলেদের নিরাপত্তায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
জেলেদের অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে এ বিষয়ে সমাধান করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলতি মাসেই কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ফিরেই গ্রেপ্তার তারপর জামিন রন হক সিকদারের