চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে ২৪ ঘণ্টার ভর্তি কার্যক্রম। আগে যে সকল স্ট্রোক ও স্নায়ুরোগে আক্রান্ত রোগী সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটার মধ্যে নিউরোলজি ওয়ার্ডে আসতেন, তাদের ওয়ার্ডে সরাসরি ভর্তি দেয়া হতো। এই সময়ের পরে যেসব রোগী আসতেন, তাদের হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি দিয়ে পরদিন নিউরোলজি ওয়ার্ডে পাঠাতেন চিকিৎসকরা। বলা যায়, প্রাথমিক চিকিৎসাটা শুরু হতো মেডিসিন ওয়ার্ডে। তবে গত ১ নভেম্বর থেকে নিউরোলজি ওয়ার্ডে সরাসরি ভর্তি শুরু হওয়ার কারণে বেড়েছে রোগীর চাপ। বর্তমানে হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগীদের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই স্ট্রোক আক্রান্ত অনেক জটিল রোগীদের ওয়ার্ডের গেটের বাইরে করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে রোগী ও তার স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, ওয়ার্ডে অনুমোদিত শয্যা রয়েছে মাত্র ৩৩টি। এরমধ্যে রোগীর বাড়ার কারণে ওয়ার্ডে বেড বসানো হয়েছে ৮৫টি। বর্তমানে ওয়ার্ডের ভিতরে ও বাইরে মিলে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে। এখন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি চালু হওয়ায় সেই সংখ্যা আরো বাড়ছে। নিউরোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, ওয়ার্ডে বেড থাকুক, আর না থাকুক, আমাদের সপ্তাহে এখন ছয়দিন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি নিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডের ভিতরের বেড ও মেঝে ছাড়িয়ে এখন গেটের বাইরে সিঁড়ির পাশের করিডোরেও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রাতের বেলায় নারী চিকিৎসকদের সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ গেটে দায়িত্বরত আনসার থাকে, ওয়ার্ডের ভিতরে নিরাপত্তার জন্য। এছাড়া মেঝেতে রোগী থাকার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা রাউন্ডে রোগীদের ফলোআপ করতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়। এছাড়া গেটের বাইরে রোগীদের জরুরি প্রয়োজনের অক্সিজেন দেয়াও যাচ্ছে না। এটিও একটি বড় সমস্যা।
চন্দনাইশ উপজেলা থেকে আসা স্ট্রোক রোগী ইউনুচ আলীর ছেলে ইমরান হোসেন বলেন, গত সোমবার রাত ৩টার দিকে আমার বাবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। সে থেকে ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, এখনো আবার বাবাকে ওয়ার্ডের ভিতরে নিতে পারিনি। কারণ ওয়ার্ডের ভিতরে জায়গা নেই। এখানে ফ্যান নেই, বাথরুম নেই। এরমধ্যে মশার অসম্ভব উপদ্রব। আমরা মধ্যবিত্ত মানুষ। চাইলেও বাবাকে বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে পারছি না। চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নিউরোলজি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা ভর্তি কার্যক্রম চালু করার জন্য মেডিসিন বিভাগ থেকে বর্তমানে ৯ জন অনারারি মেডিকেল অফিসার (এইচএমও) পাঠিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসব অনারারি মেডিকেল অফিসার তাদের পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের প্রথম দুই বছর বাধ্যগত ট্রেনিংয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে ট্রেনিংয়ের একটা অংশ হিসেবে তাদের নিউরোলজি বিভাগের পাঠানো হয়। তবে নিউরোলজি ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের আশঙ্কা যদি মেডিসিন বিভাগ থেকে নিয়মিত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অনারারি মেডিকেল অফিসার পাওয়া না যায়, তবে ওয়ার্ড চালাতে হিমশিম খেতে হবে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ওয়ার্ডে সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ ছিল না। এখন পদ সৃষ্টি হলেও সেই পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।
চমেক হাসপাতাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাসানুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের নিউরোলজি ওয়ার্ডে স্ট্রোক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। স্ট্রোক রোগী ছাড়াও বিভিন্ন স্নায়ুজনিত রোগীও নিয়মিত ভর্তি হচ্ছে। ওয়ার্ডে এখন ২৪ ঘণ্টা ভর্তি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলার স্ট্রোক আক্রান্ত রোগীদের জন্য একমাত্র ভরসা এই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বর্তমানে চিকিৎসকের সংকট নেই। তবে ওয়ার্ডের রোগী চাপ থাকার কারণে ওয়ার্ডের ভিতরে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমাদের নিউরোলজি ওয়ার্ডের আওতা আরো বাড়াতে হবে। বর্তমানে মোট শয্যার তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকছে।