স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, বায়ুুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, কলকারখানা ও ইটের ভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া। নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট ধুলার কারণেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। জাতীয় সংসদে রোববার মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, বায়ুুদূষণে ল্যান্ডফিলের নির্গত মিথেন গ্যাসের প্রভাব আশঙ্কাজনক নয়। তার পরও মিথেন গ্যাস নির্গত হওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনসংক্রান্ত প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আসলে নানা কারণে বেড়ে চলেছে নাগরিক ভোগান্তি। এই ভোগান্তির অন্যতম কারণ বায়ু দূষণ, যা আমাদের জীবনকে করে তুলছে অসহনীয়। ধুলাবালি মিশ্রিত বাতাসের কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তাহীনতা দিনদিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, আমাদের কিছু সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ তা অনেক কমিয়ে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
ইতোপূর্বে দৈনিক আজাদী বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে ২০% অকাল মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যত মানুষ অকালে মারা যায়, তাদের ২০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ বায়ু দূষণ বলে উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায়। ‘বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়ার চেষ্টা : দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ু দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দশ শহরের নয়টিই দক্ষিণ এশিয়ায়, তার মধ্যে ঢাকা একটি। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক বলেন, বায়ু দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় প্রভাবফেলে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশুদ্ধ বায়ু নিশ্চিত করার ‘ব্যয় সাশ্রয়ী’ সমাধানও রয়েছে, সেজন্য দেশগুলোকে নীতি ও বিনিয়োগের সমন্বয় করার তাগিদ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত দূষণকারী কণার উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অনেক ঘনবসতিপূর্ণ ও দরিদ্র এলাকায় দূষণের মাত্রা থাকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর অন্তত ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। একই কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই দূষণে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শ্বাসনালীর বিভিন্ন রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ তৈরি হয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। তাতে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যায়; উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় এবং অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়।
অন্যদিকে, ‘ফিটনেস নেই, তবুও সড়কে ওদের দৌরাত্ম্য’ শীর্ষক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিআরটিএর দুইটি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেলের কোন ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। বাকি ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৬টি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেটের আওতায় রয়েছে। এসব গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করানোর সময় ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েছে। যেগুলো এক দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হয়। ফিটনেস করার সময় ইনকাম ট্যাক্স এবং ট্যাক্স টোকেন মিলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করে। কিন্তু চট্টগ্রামে বহু গাড়িই রয়েছে যেগুলো রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়ার পর আর ফিটনেস করাতে বিআরটিএ মুখো হয়নি। কোন কোনটি প্রথম কয়েক বছর ফিটনেস করালেও পরবর্তীতে আর করাচ্ছে না। প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী চট্টগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬টি গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত রয়েছে। বাকি ৪৫ হাজার ১৩০টি গাড়ির ফিটনেস নেই। এই হিসেব শুধু রেজিস্ট্রেশন করানো গাড়ির। রেজিস্ট্রেশন করানো ছাড়া গ্যারেজ নম্বরসহ নানা পন্থায় শহরে চালানো গাড়িগুলো এই হিসেবের বাইরে রয়েছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি টেক্সি কোন ধরনের ফিটনেস এবং হিসেব নিকেশ ছাড়াই চলাচল করছে।
তাই বায়ুদূষণরোধ করার জন্যে এখনই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। যানবাহন থেকে দূষণ এবং কালোধোঁয়া নির্গমনরোধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল।