বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

| শুক্রবার , ১৪ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়েছে, গত বছরে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত ছিল আফ্রিকার দেশ চাদ ও বাংলাদেশের বাতাস। ১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ১১ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মানদণ্ডের চেয়ে বছরজুড়ে ১৫ গুণ খারাপ অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ ও চাদের বায়ু। মাত্র সাতটি দেশ ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড বজায় রাখতে পেরেছে। সেগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দ্য বাহামাস, গ্রানাডা, এস্তোনিয়া ও আইসল্যান্ড। উদ্বেগজনক দূষণের দেশের তালিকায় চাদ ও বাংলাদেশের পরেই রয়েছে পাকিস্তান, ডিআর কঙ্গো ও ভারত। বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে ১২টিই ভারতের। বায়ুর মান নির্ণয় নিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকায় অস্পষ্টতা রয়েছে। উন্নয়নশীল অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে স্থাপিত বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সেন্সরের ওপর নির্ভর করত। এদিকে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। গেল বছর ঢাকার বায়ুতে পিএম ২.এর উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ৮০.২ মাইক্রোগ্রাম। এ তালিকায় শীর্ষে থাকা নয়াদিল্লির বাতাসে পিএম ২.এর উপস্থিতি ৯১.৮। ২০২৩ সালে তা ছিল ৯২.৭ মাইক্রোগ্রাম।

আসলে উদ্বেগজনকভাবে দূষণের কবলে পড়েছে আমাদের বাংলাদেশ। শুধু চট্টগ্রাম নগর নয়, দেশের প্রায় সব বড় বড় শহরগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া এবং ধূলি ধূসরিত রাস্তাগুলো থেকে উৎসারিত ধূলি কমে গিয়েছিল। ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও শব্দদূষণ যথেষ্ট কমে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও মানুষের জীবনযাত্রা এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসার কারণে নতুন করে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে পরিবেশ, বায়ু এবং শব্দদূষণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ মারা যায় বায়ু দূষণের কারণে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক থেকে আর বাকি ২৫ শতাংশ ফুসফুস রোগে মারা যায়। বায়ু দূষণের মাত্রা এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। হেলথ ইফেক্টস ইন্সটিটিউটের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষ মারা যায় শুধু বায়ু দূষণের কারণে। সর্বত্র গাড়ির ধোঁয়া, না হয় কলকারখানার ধোঁয়া। তবে এসবের চেয়েও বেশি দূষণ করছে নগরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটাগুলো। ফলে যেদিক থেকেই বায়ু প্রবাহিত হোক, দূষিত বায়ু প্রবেশ করছে শহরে। এ যেন দূষণের মেলা চলছে বাতাসে!

বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরে। দূষিত বায়ুর কণা এতোটাই ক্ষুদ্র যে এটি সহজেই মানুষের চোখনাকমুখ দিয়ে ঢুকে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং ফুসফুস, হার্ট, কিডনি, লিভার ইত্যাদি আক্রান্ত করে থাকে। বায়ুদূষণে দেশের এমন দুঃসহ পরিস্থিতি হওয়া সত্ত্বেও তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বায়ুদূষণ বর্তমানে একটি আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই বিপর্যয় থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণ রোধে প্রতিটি নাগরিককে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করে দূষণ কমিয়ে আনতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করতে হবে। সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কার কাজে সমন্বয় এনে স্বল্প সময়ে সংস্কার শেষ করতে হবে। দূষণরোধ করার জন্যে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা যেকোনো দূষণ রোধ করতে পারে কিন্ত শুধুমাত্র সচেতন হয়ে এখন দূষণ রোধ করা সম্ভব না। দূষণরোধে এখনই যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে অনেক দেরি হয়ে যাবে। বায়ুদূষণ রোধ করার জন্যে এখনই সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে। পরিবেশ সংক্রান্ত যেসব আইন আছে, সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। রাস্তাঘাট ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দূর করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে