বায়ু দূষণের প্রভাবে বছরে লক্ষাধিক মৃত্যু

স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে বিরাট অর্থনৈতিক ব্যয় জড়িত : গবেষণা

| রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

বায়ু দূষণের প্রভাবে (বার্ষিক গড় পিএম ২.) প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া বায়ু দূষণের কারণে হার্ট ডিজিস, স্ট্রোক, হাঁপানিশ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও ফুসফুস ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এর নতুন এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সিআরইএর গবেষণা বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশের তালিকায় স্থান পায়। যেখানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান (পিএম ২.) ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বার্ষিক জাতীয় মানদণ্ড ৩৫ মাইক্রোগ্রামের দ্বিগুণের বেশি। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড ৫ মাইক্রোগ্রামের ১৫ গুণ বেশি। বায়ুর এমন চরম দূষণ জনস্বাস্থ্যের ওপর অনিবার্য পরিণতি ডেকে আনছে। বিভিন্ন বয়সীরা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ৫ বছর কম বয়সী শিশুদের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। খবর বাংলানিউজের।

গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশে সূক্ষ্মকণা বায়ু দূষণে জনস্বাস্থ্য প্রভাব’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও সেন্টার ফর রিসার্চ এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার নামে দুটি সংগঠন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পিএম ২.এর সংস্পর্শের প্রভাবে উল্লেখযোগ্য রোগবালাই হয়। আনুমানিক হাঁপানির কারণে ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়ে বার্ষিক ২৬৩ মিলিয়ন কর্মদিবস হারিয়েছে। ৯ লাখ অকাল প্রসব ও বার্ষিক ৭ লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে বিরাট অর্থনৈতিক ব্যয় জড়িত। যার মধ্যে উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস অন্তর্ভুক্ত। ২০১৯ সালে সার্বিকভাবে এ ব্যয়গুলো ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ।

সিআরইসিএর বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় বায়ুমানের মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার) পূরণ করা সম্ভব না হলে তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এতে মৃত্যুহার ১৯ শতাংশ হ্রাস, আয়ুষ্কালজনিত সমস্যা (ওয়াইএলএল) ২১ শতাংশ ও অক্ষমতার সঙ্গে বসবাস করা (ওয়াইএলডি) ১২ শতাংশ হ্রাস করতে পারে।

এছাড়া ডব্লিউএইচওর ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা বায়ুর মান প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা সম্ভব হলে মৃত্যুহার ৭৯ শতাংশ হ্রাস পাবে, যা প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা করবে। সেই সঙ্গে হাঁপানিশ্বাসকষ্ট প্রায় সমস্ত জরুরি চিকিৎসক ভিজিট, অকাল প্রসব ও বার্ষিক ২৬৩ মিলিয়ন অসুস্থতাজনিত ছুটি এড়ানো যাবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাংলাদেশকে নিজস্ব জাতীয় নির্দেশিকা মেনে চলার পাশাপাশি তা প্রয়োগ করতে হবে। মাঝারি মেয়াদে ২০০৫ সালে ডব্লিউএইচওর নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিকা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম অর্জন করা উচিত।

কয়লা ও ডিজেলের মতো কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দীর্ঘমেয়াদে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করা উচিত। এছাড়া ক্লিন পরিবহন ব্যবস্থা ও শিল্প সম্প্রসারণ দীর্ঘমেয়াদে পিএম ২.৫ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

সিআরইএর বায়ু মান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার অপরিণত শিশু, কম ওজনের শিশুর জন্ম ও শিশু মৃত্যু ঘটছে। এ পরিস্থিতি এমন হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, যা সবচেয়ে অরক্ষিতদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম। পিএম ২.৫ দূষণ প্রতি বছর প্রায় ২৬৬ মিলিয়ন কর্মদিবসের ক্ষতি সৃষ্টি করে, যা উৎপাদনশীলতার বড় ধরনের ক্ষতি করে ব্যবসা ও পরিবারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করে দেয়। বাংলাদেশের বায়ু দূষণ সমস্যার সমাধান জনস্বাস্থ্য ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সমতুল্য।

ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে গিয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা শুধু মানুষের শরীরেই প্রভাব ফেলছে না, বরং বিপর্যস্ত করে তুলছে মানসিক স্বাস্থ্যকেও। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেঙ ২০২৪ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর মানুষের গড় আয়ু ২.৭ বছর হ্রাস পেয়েছে। তবে উক্ত প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের নাগরিকদের গড় আয়ু হ্রাস পেয়েছে ৪.৮ বছর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে
পরবর্তী নিবন্ধচুক্তি তো হলো, ইসরায়েল মানবে তো?