কলেজে পরীক্ষা চলছিল। গতকাল শনিবার বিকাল ৩টায় ছিল ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা। প্রস্তুতিও শেষ। বাবার মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে দুপুর ১টার কিছু পরে কলেজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ফাতেহা জাহান জেভা (১৮)। নগরীর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের (মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম) ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বাড়ি সীতাকুণ্ডের কালুশাহ নগর ফৌজদার বাড়ি এলাকায়। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় সতর্কভাবেই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন বাবা মো. ফারুক। কিন্তু বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডের ৩ নং ব্রিজ এলাকায় পৌঁছতেই দ্রুতগামী একটি লরির ধাক্কায় রাস্তার মাঝখানে ছিটকে পড়েন জেভা। চোখের নিমিষে লরিটি চলে যায় তার উপর দিয়ে। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় সব। প্রস্তুতি নিয়েও ইংরেজি পরীক্ষায় আর বসা হয়নি জেভার। কলেজে যাওয়ার পথেই নিভে গেছে তার জীবন প্রদীপ।
গতকাল দুপুর ২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চোখের সামনে একমাত্র মেয়ের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না বাবা মো. ফারুক। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। লরির ধাক্কায় তিনিও ছিটকে পড়েছিলেন। তবে রাস্তার এক পাশে। এতে সামান্য আঘাত পেলেও বেঁচে গেছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সকলকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করতে থাকেন বাবা ফারুক। এ সময় তিনি বিলাপ করে বলেন, আমার স্ত্রী দেখলে সে-ও মারা যাবে। ওই গাড়িটি আমি পুড়িয়ে ফেলব। এমন আহাজারিতে বারবার চলন্ত গাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান তিনি। এ সময় উপস্থিত লোকজন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। ফৌজদারহাট ফাঁড়ির পুলিশের একটি দল এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তৌহিদুল করিম বলেন, কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মেয়েটি ছিটকে সড়কে পড়ে। আর তার বাবা সড়ক বিভাজকে পড়েন। ঘটনাস্থলেই মেয়েটির মৃত্যু হয়। ঘাতক কাভার্ডভ্যানটিকে আটক করা যায়নি।
গতকাল রাত ৮টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে চমেক হাসপাতাল থেকে লাশটি নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় নিহতের মা আয়েশা আক্তারের আহাজারিতে এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বেদনাদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মা-বাবা দুজনই বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কালুশাহ নগরের মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।