বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন বিপর্যয়

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, পরিবারের ৫ ভাই নিহত, আহত তিন ভাইবোন। নিহত ভাইদের একজন ওমান প্রবাসী। দুই ভাই ফার্মেসি ব্যবসায়ী, অপর দুই ভাই চাকরিজীবী। তাদের বাবা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুরেশ চন্দ্র শীল মারা গেছেন দশ দিন আগে। বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের সকল সদস্য বাড়িতে চলে আসেন এবং বাবার সৎকার সম্পন্ন করেন। ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী বাবা মারা যাওয়ার দশদিনের মাথায় শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এজন্য বাড়ির সামনে প্যান্ডেল তৈরি হয়। কিন্তু এর আগেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটাই ‘চাপা পড়েছে’।
নিহতদের নিকটাত্মীয়রা জানান, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রয়াত বাবার আত্মার শান্তি কামনায় গতকাল ভোরে তারা বাড়ির কাছের নির্জন এলাকায় ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করতে যান। তখন সবাই ছিলেন এক পোশাকে (সাদা কাপড়ে)। সেখানে তারা মহাসড়কের পূর্বাংশে সড়ক থেকে অন্তত দুই ফুট দূরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে চকরিয়া থেকে কঙবাজারমুখী একটি সবজি বোঝাই পিকআপ তাদেরকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, দাবি পরিবারের : পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ তাদের কেউ সড়কের উপর ছিলেন না। হতাহতরা সড়ক থেকে অন্তত দুই ফুট দূরে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু চকরিয়া থেকে কঙবাজারগামী সবজি বোঝাই পিকআপ তাদেরকে মুহূর্তের মধ্যে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন, হাসপাতালে নেওয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেলে আরেকজন নিহত হন। আহত হন এক বোনসহ তিনজন।
ঘটনাস্থল থেকে প্রাণে বেঁচে ফেরা প্লাবন শর্মা বলেন, তারা সবাই মহাসড়ক থেকে অন্তত দুই ফুট দূরে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাছাড়া মহাসড়ক থেকে সামান্য নিচু এলাকায় তারা অবস্থান করছিলেন। কেউ সড়ক পারাপারও করেননি। কিন্তু ঘাতক চালক তাদের ওপর দিয়ে গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যান। তবে কী কারণে চালক এমন কাণ্ড ঘটালেন তা বুঝে উঠতে পারছি না।
পায়ে আঘাত পাওয়া প্লাবন বলেন, আমরা সাত ভাই সাদা কাপড় পরিহিত ছিলাম। কাঁধে ছিল উত্তরীয়। বাবার শ্রাদ্ধের আগের দিন আমাদের পরিবারের ওপর এমন মহাবিপদ আসবে ভাবতেও পারিনি।
আহাজারিতে ভারী পরিবেশ : হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে পাঁচ সদস্য নিহত হওয়ায় আকাশ ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবারে। নিহতদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। বুক চাপড়ে কান্না করতে করতে নিহত অনুপম শর্মার স্ত্রী পপী সুশীল বলতে থাকেন, আমাকে তো কিছুই দিয়ে যাওনি। আমাকে এভাবে কেন রেখে গেলে? আমাকেও কেন তোমার সাথে নিয়ে গেলে না? আমি এখন কী নিয়ে বেঁচে থাকব?
কুতুবদিয়ায় ভাঙন থেকে বাঁচতে চকরিয়ায় ঠিকানা গড়েছিল : মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় একসঙ্গে ৫ জনকে হারানো পরিবারটির স্থায়ী ঠিকানা ছিল কঙবাজারের কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল সুশীল পাড়ায়। প্রতি বছর সাগরবক্ষে তাদের বাড়িভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পুরো পরিবার চলে আসে চকরিয়ার মালুমঘাটে। সেখানে হাসিনা পাড়ায় স্থায়ী বসতি নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় আজ পুরো পরিবারে নেমে এসেছে বিপর্যয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রেখে মেট্রোরেল সমীক্ষার প্রস্তাব
পরবর্তী নিবন্ধমেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডি এক বছরের মধ্যে শেষ করার তাগিদ