বাবা প্রতিটি পরিবারের নির্ভরযোগ্য একজন অভিভাবক। কাজে যাবার সময় এবং কাজ শেষে বাসায় ফিরলে বাবাকে জড়িয়ে ধরে নানা রকম বায়না প্রতিটি সন্তানের আবশ্যিক একটা বিষয়। এটা যেন প্রতিটি সন্তানের রুটিন ওয়ার্ক। বাবা সন্তানের সকল বায়না হাসিমুখে গ্রহণ করে সন্তানকে আশ্বস্ত করে। বাবা সাধ্যমতো সন্তানের আবদার বায়নাগুলো পূরণ করতে চেষ্টা করে। হাটে মাঠে মেলায় পার্কে বাবার সাথে ঘুরতে যেতে সন্তানেরা আনন্দ পায়। সন্তানের সে আনন্দটাও বাবা পূরণ করে। রাস্তায় বের হলেই বাবার হাত ধরে সন্তানের হেঁটে চলা চোখে পড়বেই। বাবার সান্নিধ্য সন্তানকে আনন্দ দেয়। অকৃত্রিম এক ভালোলাগা নিজের ভিতর সৃষ্টি হয়। তাই বাবা সন্তানের কাছে হয়ে উঠে প্রিয় একজন মানুষ। মা যখন বাসায় সন্তানকে শাসন করে বাবা কাজ থেকে ফিরার সাথে সাথে সন্তান মায়ের নামে নালিশ জানায়। মা তাকে মেরেছে বা বকেছে। বাবার কাছ থেকে মাকে বকা দেবার কথা আদায় করে নেয়। এমনই মধুর সম্পর্ক বাবা আর সন্তানের। প্রত্যেক সন্তানের একান্ত চাওয়া বাবার স্নেহ মমতা আদর ভালোবাসায় নিত্যদিন বেড়ে উঠা। কারণ বাবা হচ্ছে মাথার উপর ছাতার মতো। বৃষ্টির সময় বৃষ্টির ফোটা থেকে বাঁচাবে আবার সূর্যের প্রখর তাপ থেকে শীতল পরশ দেবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমি বঞ্চিত বাবার স্নেহ মমতা আদর ভালোবাসা থেকে। অবশ্য মা এবং বড় ভাইয়েরা বাবার অভাব বুঝতে দেয়নি। আমরা ছিলাম তিন ভাই এক বোন আমি ছিলাম তৃতীয় বোনটা আমার ছোট। মা খুব সংগ্রাম করে আমাদের মানুষ করেছেন। আমার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবা এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যান। বাবার ফুসফুসে পানি জমেছিল। ভারতের কোলকাতা গিয়ে একটা হাসপাতালে ছাব্বিশ দিন চিকিৎসা নেবার পর শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন সালটা ছিল ১৯৮১। একটু আধটু ছাড়া বাবার কোনো স্মৃতিই আজ আমার মনে নেই। শুধু মনে পড়ে বাবা স্কুলে যাবার পূর্বে ইজি চেয়ারে বসে আরাম করতেন আর মা প্রতিদন একটা সিদ্ধ ডিম এনে বাবার হাতে দিতেন। ডিম খাবার লোভে আমি ইজি চেয়ারের নিচে গিয়ে বসতাম। বাবা প্রতিদিন অর্ধেক ডিম খেয়ে বাকি অর্ধেক আমাকে দিয়ে দিতেন। সিদ্ধ ডিমের প্রতি সেই যে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে সে ভালোবাসা আজও আমাকে ঘিরে রেখেছে। এখনও ডিম সিদ্ধ আমার অত্যন্ত প্রিয়। বাবাকে নিয়ে আমার মনে থাকা এটাই একমাত্র স্মৃতি। বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এলাকার সবাই বাবাকে খুব সম্মান এবং মান্য করতেন। যেদিন বাবা ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন সেদিন নাকি এলাকার অনেক লোক বাবাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেন সেকথা এখনো গ্রামের লোকেরা বলে। ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে বাবা একটা চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাড়িতে। সে চিঠিটা এখনো আমাদের কাছে আছে। বাবার শেষ স্মৃতি হয়ে।