বাবার মৃত্যুতে সংসারের বড় বোঝা ছোট্ট রাশেদের কাঁধে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা। নগরীর মুরাদপুর ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে যার যার কাজে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত পথচারীরা। ব্রিজের উঠানামার সিঁড়িতে ভিক্ষুকরা যখন থালা বাটি নিয়ে ভিক্ষার জন্য হাত পাতছিল, তখন ব্রিজের মাঝখানে কয়েকটি শন পাপড়ি আর চিপসের প্যাকেট সাজিয়ে বসে আছে এক শিশু। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছুক্ষণ পর পর হাকডাক দিচ্ছিল ছোট্ট শিশুটি। কথা বলে জানা যায়, ৯ বছরের এই শিশুটির নাম মো. রাশেদ। তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ায়। মা ও ছোট্ট দুই ভাইবোন নিয়ে থাকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায়। তিন বছর আগে থেকে মুরাদপুরের এই ফুটওভার ব্রিজে শন পাপড়ি আর চিপস বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছে সে। চট্টগ্রাম শহরের ব্যস্ততম মোড়গুলোতে যেখানে ছোট ছোট শিশুরা ভিক্ষার জন্য পথচারীদের কাছে বিভিন্ন বায়না ধরে সেখানে শন পাপড়ি বিক্রি করা শিশুটি সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।

জানা যায়, ছয় বছর বয়সে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা যায় রাশেদের বাবা মিজান। রেখে যায় সে সহ তার ছোট দুই ভাইবোন। বাবা মারা ওয়ার এক মাস পর দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় তার মা রোকেয়ারও। সেই থেকে তাকে নামতে হয় জীবনযুদ্ধে।

নিয়মিত মুরাদপুরের এই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা কয়েকজন জানান, শিশুটি অনেক দিন যাবত শন পাপড়ি, চিপসসহ বিভিন্ন শিশু খাবার বিক্রি করে আসছে এই জায়গায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচা বিক্রি করে সে। ব্রিজের দ্বারে দ্বারে যেখানে অন্যরা ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যস্ত সেখানে শন পাপড়ি বিক্রি করা শিশুটির দিকে এক নজর দেখতে ভুলেন না পথচারীরা। তাকে উৎসাহ করতে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনও অনেকে অতি আগ্রহে কিনে নিয়ে যায় তার পণ্যগুলো।

ছোট্ট বয়সে পরিবারের বড় দায়িত্ব কাঁধে নিলেও লেখাপড়া থেকে বিরত হয়নি রাশেদ। নতুন ব্রিজ এলাকার একটি হেফজখানায় পড়ে সে। তার আয় দিয়ে চলে ছোট ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচও। মাদ্রাসা ছুটির পর শন পাপড়ি আর চিপসের প্যাকেটগুলো নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে কিনে নিয়ে এসে মুরাদপুরের এই ফুটওভার ব্রিজে প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি করে ছোট্ট রাশেদ। এভাবে তার আয়ের উপর চলে পুরো সংসার। খেয়ে না খেয়ে আগে জোগাড় করতে হয় বাড়ি ভাড়ার ৬ হাজার টাকা। এছাড়া আছে অন্যান্য খরচ। পরিবারের সকল খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তবে চাকরি নয় ব্যবসাই করতে চায় শিশুটি।

রাশেদ দৈনিক আজাদীকে বলে, আমি অন্যজনের কাছে কেন ভিক্ষা চাইবো। কারো কাছে হাতপাতা লজ্জার। আমি ব্যবসা করছি। আমার আয়ের টাকা দিয়ে পরিবার চলে, ছোট ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ যোগাড় হয়। দৈনিক আমার আয় ২শ থেকে ৩শ টাকা মত। এইগুলো দিয়ে কোনো রকম চলে যায়। রাশেদ বলে, আমি চাকরি করতে চাই না, ব্যবসা করতে চাই। চেষ্টা করছি, আমার ব্যবসা যেন আরো বড় হয় এবং আয়টা যেন আরেকটু বাড়ে। এতে মাকে সুখে রাখতে পারব এবং আমার ছোট ভাইবোন দুটিকে আরেকটু ভালো খাওয়াতে পারব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারত হাসিনাকে ট্রাভেল পাস দিলেও সম্পর্কে অবনতি হবে না : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ১৬ বছরের নির্যাতনের বিচার না পেলে বাড়ি ফিরে যাবো না