বাবার খুনের বিচার পেতে আইনজীবী হন ছেলে

| মঙ্গলবার , ২৬ জুলাই, ২০২২ at ৪:২০ পূর্বাহ্ণ

এলাকার মানুষ বলত উকিল হতে পারলে আদালতে গিয়ে মামলা চালানো যায়; তাই কিশোর এরশাদ ঠিক করেন বাবা হত্যার বিচার পেতে তিনি আইনজীবী হবেন।
বাবার খুনের সময় ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। আর নিজে আইনজীবী হন ২০১২ সালে। হত্যার সাড়ে ২২ বছর পর গতকাল সোমবার রায় হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে। ৪৩ বছর বয়সে খুন হওয়া নুরুল কবিরের সন্তান হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ এখন পুরোদস্তুর আইনজীবী। বাবার হত্যা মামলা পরিচালনা করা আইনজীবীদের মধ্যেও তিনি একজন।
১৯৯৯ সালের ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর রুস্তমের পাড়া আজলা পুকুরের পাড়ে নুরুল কবিরকে হত্যা করা হয়। পরে ওই ঘটনায় স্ত্রী খালেদা ইয়াসমিন থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তে হত্যাকারী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন তারই বড় ভাই নুরুল ইসলাম ও তিন ছেলে মো. ওসমান গণি, সরোয়ার কামাল ও আব্বাস উদ্দিন। সোমবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস ওয়াহিদের আদালত শুনানি শেষে এই চার আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। খবর বিডিনিউজের।
খুন হওয়ার তিন মাস আগে দেশে ফিরেছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী নুরুল কবির। তার চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ তৃতীয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লোকমান হোসেন চৌধুরী জানান, ভাতিজা ইসমাইলকে বিদেশে নিয়েছিলেন নুরুল কবির। এজন্য এক লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয় জানিয়ে বড় ভাইয়ের কাছে টাকা চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ ছিল। এর জেরেই ভাই ও ভাতিজার হাতে খুন হতে হয় তাকে। তখন মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র এরশাদ। এরপর ২০০৭ সালে তিনি আলিম পাস করেন। ভর্তি হন আইন বিষয়ে।
এরশাদ বলেন, যখন বাবা খুন হন তখন আমার ক্লাস সিঙের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে মায়ের সংগ্রাম শুরু হয়। মামলার বাদীও আমার আম্মা। তখন এলাকার মানুষ বলত উকিলরা আদালতে গিয়ে মামলা লড়তে পারে। তখনই মনে মনে ভাবি আমি বড় হয়ে উকিল হব। তাহলে বাবার হত্যা মামলা লড়তে পারব। বিচার পাব। গতকাল তাদের পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়। রায় ঘোষণার পর এরশাদ বলেন, ছেলে হয়ে বাবার হত্যা মামলায় শুনানিতে হাজির থাকতে পেরেছি, আজ রায় ঘোষণার দিন উপস্থিত থাকতে পেরে আমি সন্তুষ্ট। রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষের বাইরে মা খালেদা ইয়াসমিন ছেলে এরশাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করেন। ছেলের চোখে তখন পানি।
‘মূলত বাবা হত্যার বিচারের জন্যই আমি আইনজীবী হয়েছি। আমার তিন ভাই বিদেশে থাকে। আমার জন্যও ভিসা হয়েছিল। কিন্তু আমি যাইনি। আইনজীবী হব, বাবার হত্যার বিচার পাব এই আশায়।’
রায় ঘোষণার পর নুরুল কবিরের স্ত্রী ৬৩ বছর বয়সী খালেদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, আশা ছিল খুনের বিচার পাব। আজ বিচার পেয়েছি। আমার ছেলে অনেক করেছে। রায়ে আমি খুশি। রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছেলে এরশাদ বলেন, আসামিদের মধ্যে আব্বাস উদ্দিন আমার বাবাকে শাবল দিয়ে আঘাত করেছিল। আমরা তার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। এখন যে রায় হয়েছে তাতে মোটামুটি সন্তুষ্ট। পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে, জানতে পারব কেন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়নি।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদরিদ্র মানুষেরা শুধু স্বপ্নই দেখেন না, পূরণও করতে পারেন
পরবর্তী নিবন্ধশাহ আমানতে দুবাই ফেরত যাত্রীর কাছ থেকে সিগারেট জব্দ