বাবা মা

ফারজানা আজিম | সোমবার , ৫ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

কী ভয়ঙ্কর দিনই না সামনে আসছে আমাদের। কী শান্তিতে ছিল আমাদের নানী-দাদীরা। সন্তান লালন পালন করতে তাঁদের এত হিমশিম খেতে হয় নি আমাদের মত। সন্তান জন্ম দেওয়াটাও তাদের আমাদের মত এত ভয়ঙ্কর ছিল না। মাসে মাসে ডাক্তার দেখানোর বিড়ম্বনা আর পেট কেটে বাচ্চা বের করার মতন ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা ছিল না । তবে হ্যাঁ প্রসব বেদনা সর্বকালে সর্বযুগে সব মায়েদেরই একই রকম ছিল আছে এবং থাকবে। আর সন্তানেরা, তারা কিন্তু নেই আর আগের সেই অবুজ সুবোধ ও বাধ্য সন্তান। তারা যে এখন আগের মতন সেই যুদ্ধ করে কষ্ট করে মায়ের পেট থেকে দুনিয়াতে আসে না, তারা এখন পৃথিবীতে আসে ডাক্তারের দেওয়া সেই নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট ক্ষণে মায়ের পেট কেটে বীরের বেশে। তাইতো মায়ে মায়ে এত তফাৎ।
আমাদের পেটকাটা সন্তানদের মায়েরা আজ ব্যাকডেটেড ওল্ড মডেল, তাই তাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যে মা তার সন্তানকে তার ছোট্ট পেটে দশ মাস দশ দিন সব অবস্থাতে বহন করে, সে সন্তান পৃথিবীতে এসে বড় হয়ে সেই মাকে স্থান দিতে পারেনা ৩০০০ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে। পৃথিবী ছোট হয়ে আসলেও সন্তানের জন্য কখনো মায়ের পেট ছোট হয়ে আসে না। একজন মা একসাথে ৫জন সন্তানকে পেটে ধরলেও ৫ জন সন্তান একজন মায়ের দায়িত্ব নিতে পারে না। শুনেছি পৃথিবী এখন শেষের দিকে, অনেক কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে এই পৃথিবীতে। মানুষ চাঁদে গেছে মঙ্গলে গেছে বসবাস স্বপ্ন দেখছে মঙ্গল গ্রহে কিন্তু সন্তানের প্রতি মায়ের সেই ভালোবাসা অকৃত্রিম স্নেহ এখনো সেই অপরিবর্তনীয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সন্তানরা পরিবর্তন হলেও মা-বাবা কিন্তু ঠিক আগেরই মত আছে। সন্তানদের মানুষ করার জন্য এখনও অনেক বাবা-মা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন রাত পরিশ্রম করছে মুখ বুঝে সহ্য করছে অত্যাচার অপমান ও কষ্ট। কিন্তু কি প্রতিদান পাচ্ছেন তাঁরা। যতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি আমরা সন্তানেরা, কোন প্রতিদান আশা করেনা কোন মা-বাবা কিন্তু এতটুকু আশাতো তারা করতে পারে তাদের সন্তানদের কাছে তারা যেন তাদের শ্রদ্ধা করে ভক্তি করে। আমি ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এর চেয়ে বেশি কিছু কোন বাবা-মার চাহিদা নাই। কিন্তু আমরা সন্তানেরা বড় হয়ে মানুষ হয়ে মনে করি বাবা-মা রা বুঝি আমাদের অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে ফেলতে চায়। আমরা সন্তানেরা একবারও বুঝতে চাইনা আজ আমাদের এখানে পৌঁছাতে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে তাদের কত স্বপ্ন যে তারা বিসর্জন দিয়েছে, কত ইচ্ছেকে যে তারা দিয়েছে কবর তাদেরই মনের ভেতরে, শুধু আমরা ভাল থাকব বলে আমাদের ভালো রাখবে বলে।
মায়ের কাজ করলে সন্তান কখনো কাজের লোক হয়না,বরং সন্তানের মহাপুণ্য লাভ হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরে নানান রকম রোগ শোক বাসা বাঁধে, তাই তখন তাঁদের মন মেজাজ ঠিক থাকেনা। আমাদের মা বাবার বেলায়ও তাই। এসময় তাদের আচরণও তাই হয়। তখন আমাদের উচিৎ একটু মানিয়ে নেওয়া। কারণ আমাদের এমন অনেক কিছুই এক সময় হাসি মুখে তাঁরা মেনে নিয়ে ছিল। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা ‘যুগের ধর্ম এই,পীড়ন করিলে সে পীড়ন পীড়া দেবে তোমাকেই’।
তাই আমাদের উচিত আমাদের বাবা-মার যথাযথ যত্ন নেওয়া, তাদের ভালো মন্দ, সখ আহ্লাদ, ইচছা অনিচ্ছা সব কিছুর প্রতি নজর দেওয়া, সব সময় তাদের হাসিখুশি রাখা। বাবা মা ভালো থাকলে আমাদের পরিবার ভালো থাকে। আমরা যদি আমাদের বাবা মা কে ভালোবেসে আমাদের কাছে রাখি, বৃদ্ধাশ্রমে রেখে না আসি, তাহলে আমাদের সন্তানরাও আমাদের শ্রদ্ধা করবে ভালোবাসবে, তারাও আমাদের তাদের সাথে বাকী দিনগুলো আনন্দে কাটিয়ে দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁচতে হলে, সচেতন হতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধপাল্টে গেছে হিসাব : প্রতিরোধের মুখে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী