বাবা ছাড়া

প্রবীর বড়ুয়া | শুক্রবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:২৭ অপরাহ্ণ

দশ বছর আগের কথা। ২০১২ সালের ২১ জানুয়ারি। তখন আমি ডেইলি সান পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতাম। রাতে কাজ শেষে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। কাজীর দেউড়ি আসার পর মামাতো ভাই সঞ্জয় ফোন করে জানালো আমার বাবা বাথরুমে পড়ে গেছেন। আমি যেন বাসায় আসি। আমি তাড়াতাড়ি মাকে ফোন করলাম। তিনি তাড়াহুড়ো না করে ধীরেসুস্থে বাসায় আসতে বললেন। আমি তাড়াতাড়ি একটা রিকশা নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিই। বাসায় ফিরতে ফিরতে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না বাবার আসলেই কী হয়েছে। ভাবলাম তিনি পড়ে গিয়ে হয়তো সামান্য আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু আসলেই কী হয়েছে সেটা মাথায় আসছিল না। মোগলটুলী বড়ুয়া পাড়ার গলির মুখে রিকশা থেকে নামার পর বাসার দিকে যেতে যেতেই চোখে পড়ল মানুষের সারি আমাদের বাসার দিকে। বাসায় পৌঁছে দেখি অনেক মানুষ। আমার জন্মের কিছুদিন পর থেকেই এ পাড়ায় থাকছি। পাড়া কিংবা কলোনিতে থাকার সুবিধাটা হলো বিপদে-আপদে চারপাশের সবাই দ্রুত এগিয়ে আসেন। বাসায় ঢুকে তাড়াতাড়ি বাবার কাছে চলে গেলাম। দুপুরে অফিসে যাওয়ার আগে তার সাথে কথা হয়েছিল। এখন তিনি সোজা হয়ে শুয়ে আছেন। কথা বলছেন না। শুধু তার নিথর দেহটা পড়ে আছে এখানে। প্রাণটা দেহটাকে ছেড়ে গেছে আমি আসার আগেই। আমি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। কাঁদতে কাঁদতেই বন্ধু-বান্ধব, সাংবাদিক সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন অনেককেই ফোন করে দুঃসংবাদটি জানালাম। অনেকেই এলেন, সান্ত্বনা দিলেন কিন্তু আমার কান্না আর থামে না। জীবনে পরিচিত-অপরিচিত অনেকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছি, চোখের জল ফেলেছি। অন্যজনের বাবার মৃত্যুতেও কেঁদেছি কিন্তু কখনও বুঝতে পারিনি নিজের বাবা হারানোর কষ্টটা কেমন। কত সময় কত কিছুর জন্য বাবার সাথে রাগ-অভিমান করেছি। এটা-ওটা না পেলে বাবাকে দোষ দিয়েছি। কিন্তু নিজের বাবা হারানোর পর সেদিনই প্রথম বুঝলাম, ‘বাবা তুমি আমার জীবনের বিশাল রঙিন খাতা, তোমাকে ছাড়া জীবনটা শুধু কয়েকটি সাদা পাতা।’ লেখক : সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধপৃথিবীর সব শিশু ভালো থাকুক
পরবর্তী নিবন্ধঅধ্যক্ষ আল্লামা মুসলেহ উদ্দিন স্মরণে