বান্দরবানে জনপ্রিয় হচ্ছে মিষ্টি পানের চাষ। জেলায় পানের বরজে স্বপ্ন বুনছেন চাষীরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম এবং সদর উপজেলার বিস্তৃত এলাকা জুড়েই বেড়েছে পানের চাষ। সবচেয়ে বেশি মিষ্টি পানের চাষ হয় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। এবছর সাতটি উপজেলায় ১৩৪ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭০ মেট্রিকটন। পান চাষের মাধ্যমে বান্দরবানে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে অনেকের। এদিকে পানের বরজে একবার পান চাষ করলে দশ থেকে বারো বছর পর্যন্ত একটানা পান বিক্রি করা যায়। তিন মাস পরপর পান তোলা যায়। তবে পান তোলার পর সেচ, সার এবং ক্ষেত ও বরজ পরিচর্যায় খরচ লাগে। পান চাষে যেমন খরচ কম, তেমনি অধিক লাভজনকও।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধুই মিষ্টি পানের বরজ। পানের বরজে এ ইউনিয়নে স্বপ্ন বুনছেন তিন শতাধিকের অধিক চাষী। তাদের কেউ ক্ষেত থেকে পান ছিঁড়ে ঢোলাই তুলছেন, আবার কেউ করছেন ক্ষেতের পরিচর্যা। পান চাষী মো. আবু সৈয়দ ও জাফর আলম বলেন, তাদের দুজনের ৭টি পানের বরজ রয়েছে। চল্লিশ শতক জমিতে পান চাষে তাদের ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। বাপদাদার আমল থেকেই তাদের পরিবার পান চাষের সাথে জড়িত। পান চাষের আয়েই তাদের সংসার চলে স্বাচ্ছন্দ্যে। শ্রমিক আব্দুর রশিদ বলেন, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের পানের বরজে দৈনিক ৫শ টাকা মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে সংসার চলে তাদের। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পান ক্ষেতে কয়েকশত শ্রমিক কাজ করে।সফল পান চাষী সরোয়ার কামাল ও মো. ইসমাইল বলেন, পানের একটি ভাড় ১৫ হাজার টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হয়। একেকটি ভাড়ে ৪৫ বিরা পান থাকে। পানের সাইজ ছোট–বড় হিসেবে দাম উঠানামা করে। শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় পান চাষে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। সাথে মুনাফাও। বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবান কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপ–পরিচালক এস.এম শাহনেওয়াজ বলেন, জেলায় মিষ্টি পানের চাষ খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক এবং পরিচর্যার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ফলন উৎপাদন হওয়ায় পান চাষ করছে চাষীরা। বাজারে পানের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। এখানের আবহাওয়াও পান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পোকার আক্রমণে প্রতিকার এবং পরিচর্যার মাধ্যমে অধিক ফলন উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে চাষীদের।