চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হওয়ার কথা জানাচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বান্দরবানে, আর সবচেয়ে কম ১১ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে খাগড়াছড়িতে। ক্ষতির হিসাবে চট্টগ্রামের অবস্থান দ্বিতীয়, যার আর্থিকমূল্য ১৮৪ কোটি টাকারও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী, এ মাসের শুরুতে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় তাদের আওতাধীন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষীপুরের ৫০ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৭৪৫ দশমিক ৩ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বেশির ভাগই চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের। চট্টগ্রাম জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১১ হাজার ৬০৯ দশমিক ২ হেক্টর জমি, আর কক্সবাজারে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৪৪৪ দশমিক ৫৫ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, রোপা আমন ধান ও আমনের বীজতলা এবং বিভিন্ন ধরনের শরৎকালীন সবজি।
এপ্রিল থেকে জুন মাসে রোপণ করা আউশ ধান কৃষকরা সংগ্রহ করেন জুলাই থেকে আগস্ট মাসে। আর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে রোপণ করা আমন ধান সংগ্রহ করা হয় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে। আউশ ধান সংগ্রহ ও ধানের শীষ আসার সময়েই চট্টগ্রাম অঞ্চলে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে তলিয়ে যায় বান্দরবান ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের হিসাব অনুযায়ী, পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের এক লাখ ৯১ হাজার ৭৯৭ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হওয়া ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ৩১১ কোটির কিছু বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রাম জেলায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৮৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর কক্সবাজারে ক্ষতির পরিমাণ ১১১ কোটি ২৬ লাখের বেশি।
অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার হিসাব অনুযায়ী, সাতকানিয়া উপজেলার এক হাজার ৮৪৭ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। শতকরা হিসাবে ওই এলাকার ৭৫ শতাংশ জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি টাকা। এ উপজেলার পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশে তিন হাজার ৮০০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে দুই হাজার ৬৯০ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। শতাংশের হিসেবে এ উপজেলার ক্ষতির পরিমাণ সাতকানিয়া থেকে কম হলেও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এ উপজেলায় প্রায় ৩৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন বলেন, আমি প্রায় ১১ কানি (৪ দশমিক ৪০ একর) জমিতে ধান চাষ করি। তার মধ্যে দুই কানি (৮০ শতক) জমিতে আউশ ধান করেছিলাম। ধানের শীষ আসার সময়েই বন্যার পানিতে সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমির জানান, ৯ কানি (তিন দশমিক ৬০ একর) জমিতে আমন ধানের বীজতলাও তৈরি করেছিলেন। সেগুলোও সব বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রামের সাতাকানিয়া, চন্দনাইশ উপজেলা। পাশাপাশি লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলার কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া এলাকাতেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি, যাতে এক সপ্তাহের মধ্যে আমনের বীজ দেওয়া গেলে তারা বীজতলা তৈরি করে চারা রোপণ করতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আগামী শীতকালীন চাষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। অরবিন্দু মনে করেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে পরিমাণ ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তাতে বন্যার ক্ষতি খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।