বানরের রুটিভাগের গল্প

শিউলী নাথ | শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গল্পটা অনেকের জানা। ইঁদুর রুটির টুকরো নিয়ে বানরের কাছে গিয়ে বললো, সমান ভাগ করে দিতে। বানর দাঁড়িপাল্লা নিয়ে বসে গেল। দু’পাল্লায় দু’টুকরো রাখলো। এক পাল্লায় একটু বেশি হচ্ছে দেখে ছিঁড়ে খেয়ে নিল। এবার পাল্লার অন্য প্রান্ত ভার হচ্ছে দেখে ওখান থেকেও খেয়ে নিল। এভাবে সমান ভাগ করতে গিয়ে নিজের ভাগ ভালোই বুঝে নিল। বেচারা ইঁদুর অবশিষ্ট যা ছিল তাই নিয়ে চলে গেল। একটু চোখ মেলে তাকালে এমন বানর- ইঁদুরের ভাগাভাগি সমাজের প্রতিটি সেক্টরে দেখা যায়। একদল ঠকিয়ে যাচ্ছে, অন্যদল ঠকে যাচ্ছে। যাদের হাতে ক্ষমতা বণ্টনের দায়িত্ব তারা নির্বিকার! স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে একই চেহারা দেখা যায়। আজকাল পরোপকার শব্দটা মানুষ যেন ভুলেই গেছে। ‘মানবিক মূল্যবোধ’ শুধু কথার কথা মাত্র। মানবিকতা দেখাতে গিয়ে যদি ‘তালগাছটা আমার’-বলে বিবেচিত হয়, তবে অমন মূল্যবোধের কোনো প্রয়োজন নেই। মানবতা বিপন্ন হচ্ছে যেখানে -১। একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি পেনশানের টাকা তুলতে যখন হয়রানির স্বীকার হন ২। সারাদিনের কাজের পর একজন কর্মচারী সামান্য ভুলের জন্য যখন হেয় প্রতিপন্ন হন ৩। সড়ক দুর্ঘটনায় রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যক্তিটি একটু বাঁচার আকুলতায় যখন দেখেন, তার মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ক’জন ৪। বাবা-মা সন্তানের হত্যা মামলার আসামীকে যখন প্রকাশ্যে ঘুরতে দেখেন ৫। ত্রাণের সামগ্রী যখন সাধারণের কাছে না পৌঁছে দাতার ঘর পূর্ণ করে ৬। ক্ষমতা লোভীদের দৌরাত্মে যখন প্রতিষ্ঠান, সমাজ ধ্বংসের মুখোমুখি হয়। আরো বিবিধ কারণ রয়েছে। সকল ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবে সরকার থেকে সাধারণ শ্রেণির জন্য একটি বরাদ্দ থাকলেও অনেকের কাছে তা পৌঁছে না। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে অপ্রকাশিত একটা সমাধানও রয়েছে। তা হলো বানরের হাতে রুটি তুলে দেয়ার মতো। তাদের নিজের অংশ ঠিক রেখে বাকি সমস্যার সমাধান করে দেওয়া। এতে কারো ক্ষতি হচ্ছে কী না তা খতিয়ে দেখার মতো লোকের বড় অভাব। আমরা প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের ছোট-বড় প্রত্যেক সেক্টরে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে এবং মানবিক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যেকে তাদের ন্যায্য হিসাব বুঝে পাবে এবং সমস্যা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমূল্যবৃদ্ধির মাস রমজান
পরবর্তী নিবন্ধমোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ক্ষুদ্র ঋণ এবং আমাদের অর্থনীতি