বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির অভিযোগে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ নিয়ে এই জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গত সোমবার রাতে তাদের গ্রেপ্তারের পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দু’জন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গতকাল আদালতে জবানবন্দি ৫ম পৃষ্ঠার ৪র্থ কলাম
দেওয়া দু’জন হলেন আতিকুর রহমান রাসেল ও রাহাত হায়দার চৌধুরী রানা। এদের মধ্যে রাসেলকে নগরীর আগ্রাবাদ ও রানাকে বড়পোল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মাওলা খান ও তার ছোট ভাই গোলাম রসুল খান এবং ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরিকারী আবুল খায়েরকে। এ তিনজনও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত: চলতি বছরের শুরুতে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি জলপাই আমদানি ঘোষণা দিয়ে ঢাকার চকবাজারের মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের পণ্যের একটি চালান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। পণ্যটি খালাসের জন্য সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মনোনীত সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ ২৩ এপ্রিল কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য পেয়ে কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন। এতে ওই চালানে চীনা বাদাম ও জলপাইয়ের বদলে উচ্চশুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ নিয়ে আসার বিষয়টি ধরা পড়ে। এসময় ঘোষণার বাইরে পণ্য আনার অভিযোগে আমদানিকারককে শুল্ক বাবদ ৬৫ লাখ টাকা, শতভাগ জরিমানা বাবদ ৬৬ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানার আদেশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারকের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ছাড়পত্র সনদ কাস্টমসে দাখিল করে। ১৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিও দাখিল করে প্রতিষ্ঠানটি। তাতে বিএসটিআই’র ছাড়পত্র এবং কাস্টমসের আরোপিত জরিমানা ও শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে চালানটি ছাড় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। কাস্টমসের এআরআই শাখা যাচাইবাছাই করে দেখতে পায়, পণ্যছাড়ের জন্য জমা দেওয়া ক্লিয়ারেন্স পারমিটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটি ছিল ভুয়া। এই ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ বাদী হয়ে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা সিআইডি তদন্ত করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি জালিয়াতির রহস্য উদঘাটন করে। সিআইডি জানিয়েছিলেন, সিএন্ডএফের মালিক গোলাম মওলা খানকে গ্রেপ্তারের পর তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার ভাই গোলাম ফারুক খান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখাশোনা করেন। আর খান এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্স ব্যবহার করে গ্রেপ্তারকৃত রাসেল ও রানা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করানোর ব্যবস্থা করেন।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আবুল খায়ের বন্দর-কাস্টমস ভিত্তিক ভুয়া নথিপত্র সৃজন করে জালিয়াতির সাথে জড়িত বলে সিআইডি জানায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইটটিও সে তৈরি করেছে। পারভেজকে জানায় ওয়েবসাইট তৈরি করলেও তার কাছে তথ্য আপলোড করার জন্য কোনো ডোমেইন ছিল না। তিনি নগরীর ও আর নিজাম রোডের ইশতিয়াক টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার আটশ টাকায় ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করেন। এরপর আগ্রাবাদে ক্লিক সফট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় হোস্টিং স্পেস ভাড়া নেন। পরে সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়া ছাড়পত্র সনদ তৈরি করে দেওয়া হয় রাসেল ও রানাকে।
পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ জানান, রাসেল ও রানা এর আগেও পারভেজকে দিয়ে কাস্টমসে দাখিলের জন্য ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেছে। এরা তিনজনই মূলত জালিয়াতির হোতা। পারভেজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী এবং বাণিজ্য সচিবের ছবি ব্যবহার করে এই ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে।