চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতাদের সাথে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত গুয়েন ম্যান কুওং’র মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় রাষ্টদূতের বাণিজ্য প্রতিনিধি দলও উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত সভায় ভিয়েতনাম রাষ্ট্রদূত গুয়েন ম্যান কুওং বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে, যা বিগত কয়েক বছরে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে আরো গভীর এবং দৃঢ় হয়েছে। গত দুই বছরে করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হলেও দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল স্থিতিশীল।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরে বাংলাদেশ ভিয়েতনামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উভয়দেশের ৮৮৩ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ রপ্তানি করে ভিয়েতনাম। যদিও বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১০৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত বছরের তুলনায় তা আড়াই গুণ বেশি। উভয়দেশের মধ্যে দুই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যপূরণ এবং বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করতে তিনি চিটাগাং চেম্বারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি চট্টগ্রামে ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে চিটাগাং চেম্বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ফ্যাসিলিটেড করতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি উভয়দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে চিটাগাং চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহত্তর চট্টগ্রামকে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও লজিস্টিকসের আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে এ অঞ্চলে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। এছাড়া সম্ভাবনাময় ব্লু ইকোনমি খাত এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় ও পাহাড়ি অঞ্চলভিত্তিক কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে ভিয়েতনাম যৌথ বিনিয়োগ করতে পারে। উভয়দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহ চিহ্নিত করে তা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের আদান–প্রদান, দুই দেশের চেম্বারসমূহের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, বাংলাদেশীদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং সরাসরি ফ্লাইট চালু করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। চেম্বার সভাপতি প্রতিনিধিদলের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁরা বাংলাদেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তা চেম্বারকে অবহিত করার অনুরোধ জানিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন। তিনি চট্টগ্রামে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ ও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগকারীদের জন্য চিটাগাং চেম্বারে ‘ইনভেস্টর্স লাইব্রেরি’ স্থাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া চামড়াজাত পণ্যসহ ননলেদার স্পোর্টস ফুটওয়্যার এবং মটর সাইকেল উৎপাদন খাতে যৌথ বিনিয়োগের আহ্বান জানান চেম্বার সভাপতি। মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মাহফুজুল হক শাহ, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, চেম্বারের সাবেক পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব, বাংলাদেশ–ভিয়েতনাম চেম্বারের পরিচালক অনিক রাশেদ খান এবং প্রতিনিধিদলের সদস্যবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, বেনাজির চৌধুরী নিশান, মাহবুবুল হক মিয়া, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, ওমর মুক্তাদির, বাংলাদেশ–ভিয়েতনাম চেম্বারের পরিচালক মো. আবদুস সোবাহান, দূতাবাস এবং চেম্বারের কর্মকর্তাবৃন্দ।