২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে জ্বালানি বিশেষ করে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, এলএনজি এবং আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক হ্রাস করায় দ্রব্যমূল্য কমার পাশাপাশি বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে। একই সাথে এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটেছে এবারের বাজেটে। এছাড়া দেশীয় পুঁজি বাজারকে চাঙ্গা করতে এবং বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে আশার বাণী আছে এই বাজেটে।
চেম্বার প্রশাসক বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা শিক্ষা খাতকে। এ খাতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৯ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে ৫৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি অবকাঠামোগত খাতে ২২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকাসহ মোট ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূূচি হিসেবে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে টার্নওভার করের আওতামুক্ত সীমা ৩ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি এবং ব্যাংকে আবগারি শুল্কের ক্ষেত্রে ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতির উপর আবগারি শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করায় সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহী হবে। এছাড়া বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির উপকারভোগীদের ভাতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌক্তিক পরিমাণে উপকারভোগীর সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ৪শত ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখায় ধন্যবাদ জানান চেম্বার প্রশাসক।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ আশাব্যাঞ্জক। এই প্রেক্ষিতে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোন কোন ক্ষেত্রে শুল্ক প্রত্যাহার ও কিছু ক্ষেত্রে হ্রাস করা হয়েছে। আবার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আগাম করের হার ৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নির্ধারণ এবং বাণিজ্যিক আমদানিকারকের ক্ষেত্রে আগাম কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করায় দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। এছাড়া সরকার স্বাস্থ্য সেবাকে আরও আধুনিক করতে হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি, ক্যান্সার প্রতিরোধ ওষুধসহ সকল ধরণের ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং এপিআই তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ককর অব্যাহতি প্রদান এবং দেশীয় ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণে কোল্ডস্টরেজ স্থাপনে যন্ত্রপাতি আমদানি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব কৃষি ও ওষুধ শিল্পে আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে। এছাড়া ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে বন্ড ব্যবস্থাকে সহজীকরণ ও ব্যবসাবান্ধব করার উদ্দেশ্যে সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস এবং ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা প্রবর্তন করাকে সাধুবাদ জানান। এর মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের আমদানি খরচ ও সময় উভয়ই হ্রাস পাবে।
চেম্বার প্রশাসক বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে আগাম কর সমন্বয়, রিফান্ড আবেদন ও রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা ৪ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস এবং বিদ্যমান ৪৫টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা শিথিল করে ১২টি ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের বিষয়টিকে আরও বিনিয়োগ ও শিল্পবান্ধব হবে।