বাজারে অভিযান পরিচালিত হলেও সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ

| শুক্রবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

দেশের নিত্যপণ্যের বাজার একেবারে লাগাম ছাড়া অবস্থায় চলে গেছে। চালের দাম প্রায় এক বছরে পাইকারিতে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৯ টাকা আর খুচরায় কেজিতে ১১ টাকা। অন্য নিত্যপণ্যের মধ্যে ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও সব ধরনের সবজির দাম হু হু করে বাড়ছে। ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর ভোগান্তি পোহাচ্ছে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ও কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই তারা অভিযান পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাতে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছেন তারা। সম্প্রতি রংপুরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। খাদ্যপণ্যের দাম কমার কোনো সুযোগ নেই। তিনি দাবি করেন, সরকারের সুপরিকল্পনা ও চেষ্টার পরও আমদানি কমার কারণে খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। আলু, পিয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করা হলেও তা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাল, ডাল, তেল, বয়লার মুরগি, চিনি, লবণ, আটাময়দা সব পণ্যই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মাছমাংস, আলু, পিঁয়াজ ও ডিমের দাম লাগামছাড়া। এদিকে বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে, কিন্তু তা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি সবজির দাম শতক ছাড়িয়েছে। এতে নাজেহাল ক্রেতারা। সংসারের বাড়তি খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সব শ্রেণির মানুষ। অস্বাভাবিক বাজারদরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অধিকাংশ মানুষ। ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে ক্ষেতেই কিছু সবজি নষ্ট হয়েছে। এতে সবজির সরবরাহে টান পড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, সবজি আমদানি করতে হয় না। তবু ব্যবসায়ীরা নানা ছুতায় দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন।

বাজারে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে, তবুও আগের মতোই উত্তপ্ত সবজির বাজার। বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, শীতকালে বাজারে সাধারণত লাউ, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, পটোল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে ভরপুর থাকে। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে সবজি উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই আন্তর্জাতিক বাজারের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হয়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরাও দেখান এমন অজুহাত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের মূল্যে উন্নত দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম অনেকদিন ধরেই খাটছে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না।

অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত কিছু কর্মকর্তাকর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণেই এসব অসাধু ব্যবসায়ী পার পেয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশে বাজারে কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিন্ডিকেটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আগাম সতর্ক করে দেয়। আমাদের দেশে এ রীতি আছে কিনা তা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। নিকট অভিজ্ঞতা থেকেই এ ধরনের বিশেষ সংস্থাকে কার্যকর করা দরকার। এ বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে আয় না বাড়লেও সব শ্রেণির মানুষের ব্যয় হু হু করে বাড়ছে। এসব বিষয় সংশ্লিষ্টদের নজরদারিতে আনতে হবে। কোনো ব্যত্যয় পাওয়া গেলে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে