বাজার তদারকিতে খাতুনগঞ্জে মেয়র ও ডিসি

তেল ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক আজ, এরপর অ্যাকশন প্ল্যান

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৪ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

বাজারে সংকট আছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের। অভিযোগ আছে, বাড়তি মূল্যে বিক্রিরও। এ অবস্থায় গতকাল রোববার সকালে দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে যৌথভাবে তদারকিতে গিয়ে সয়াবিন তেলের দেখা পাননি সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরিদর্শনকালে দুটি দোকান থেকে খোলা সয়াবিন তেল সংগ্রহ করা হয়, যা ল্যাবে টেস্ট করে সয়াবিন কিনা যাচাই করা হবে বলে জানান মেয়র। তেল ব্যবসায়ীরা কোথাও সরিয়ে রেখেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ইন্টেলিজেন্স আমাদের তথ্য দিচ্ছে।

এদিকে পরিদর্শনের শুরুতে মেয়র কয়েকজন খেজুর ও ফল ব্যবসায়ীর দোকানে উপস্থিত হয়ে তাদের কাছে দাম জানতে চান। এ সময় মূল্য তালিকা টাঙানো না থাকায় তাদের সতর্ক করেন। অন্য ব্যবসায়ীদেরও মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশনা দেন। একই নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।

এরপর খোলা তেল বিক্রি করা এক ব্যবসায়ীর কাছে থেকে পরীক্ষার জন্য তেল সংগ্রহ করার নির্দেশ দেন। এরপর হাজী আবুল খায়ের স্টোরে গিয়ে সয়াবিন তেলের মূল্য জানতে চান। এছাড়া আরো কয়েকটি দোকান পরিদর্শনকালে মেয়র ব্যবসায়ীদের পণ্যমূল্য সহনীয় রাখার অনুরোধ করেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, একজন বলেছেন তারা সাতকানিয়া স্টোর থেকে এনে বিক্রি করেন। আমরা মূল জায়গায় যেতে চাই। শুনেছি পতেঙ্গায় যে গুদামগুলো আছে সেখানে স্টক করা হয়েছে এবং দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়র বলেন, দাম কমাতে হবে। এটার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোনোভাবে গ্রহণ করা হবে না। বাজার পরিদর্শন শেষে মেয়র শাহাদাত উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, সাধারণ মানুষ বেশ কয়েকদিন ধরে অভিযোগ করছিল, বোতলজাত ভোজ্যতেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে এবং যেগুলো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৮০ টাকা, ২০০ টাকার উপরে চলে গেছে। সে কারণে আজ আমরা এখানে এসেছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি ভোজ্যতেল মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, দুয়েকটা জায়গায় যে তেলগুলো দেখেছি সেখান থেকে ল্যাব টেস্টের জন্য অলরেডি নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। পরীক্ষা করে দেখব, আদৌ এগুলো ভোজ্যতেলের মতো কিনা।

মেয়র বলেন, আমরা মনে করি রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা উচিত। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের বাইরে যে ধর্মীয় রাষ্ট্রগুলো আছে প্রত্যেকটি জায়গায় ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। তারা এটাকে সওয়াব হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, যেখানে রোজা এলে কেন জানি ব্যবসায়ীরা আরো অস্থির হয়ে যান। রোজার মাসে পুরো বছরের ইনকাম করার জন্য তারা পাগল হয়ে যান। আমরা এটা মনিটরিং করছি। এ মনিটরিং শুধু আজ থেমে থাকবে না। আরও হবে। আমরা আগামীকাল (আজ) তেলের ব্যবসায়ী যারা আছেন, উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক সবার সঙ্গে বসব। তারা যাতে অবিলম্বে তেল বাজারজাত করে দাম কমিয়ে আনেন এ ব্যাপারে অ্যাকশন প্ল্যান নেব।

এনবিআর এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বলা হয়েছে তেল গত বছরের চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে; তবুও বাজারে না থাকার কারণ কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, আমাদের দেশ একমাত্র দেশ যেখানে ব্যবসায়ীরা চান রাতারাতি ধনী হয়ে যেতে। আমরা আগামীকাল তাদের সঙ্গে বসব। আমরা আজ পরিদর্শনে এসেছি যাতে তাদের কথাগুলো বলতে পারি। সরেজমিনে এসে কিন্তু আমরা কোথাও তেল পাইনি।

তিনি বলেন, আমরা মনে করছি তারা তেলগুলো কোথাও সরিয়ে রেখেছেন। কোথায় সরিয়ে রেখেছেন তার তথ্য কিন্তু ইন্টেলিজেন্স আমাদের দিচ্ছে। এটা না যে আমরা জানি না। স্পষ্টভাবে তাদের বলতে চাই, কোথায় তারা তেল রেখেছেন আমরা জানি। এবং সেটা যদি প্র্যাকটিক্যালি গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে কিন্তু আইন আইনের গতিতে চলবে।

মেয়র বলেন, আমরা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে রেখেছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসব, তাদের বলব তেল যেন সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসে।

জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, আমরা তেলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আগামীকাল (আজ) বসব। বসার পরও যদি দেখি বাজারে তেল সহনীয় পর্যায়ে নেই তাহলে আমরা অ্যাকশনে যাব। মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে বাজারে তেল সংকট করতে না পারে, সেজন্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যৌথ অভিযান চালাব। আমরা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সকল পণ্যসামগ্রী রাখতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা ভিজিল্যান্ট আছি। বাজারে ভোজ্যতেলের ব্যাপক সংকট আছে। সাথে চিনিরও সংকট আছে। আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে টিকে গ্রুপ তেল বাজারজাত করছে না। আমরা টিকে গ্রুপের সাথে বসব।

তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে বাজারে তেল সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এবং নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে সক্রিয় আছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, মহানগরী ও জেলাকে ২১টি সেন্টারে ভাগ করেছি। রোজার মাসে আমরা চারশ অভিযান করব। রোজার ভিতরে যাতে দ্রব্যসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় থাকে সেজন্য আগামীকাল (আজ) থেকে ৬টি স্পটে ৬৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস, ১১৫ টাকা ডজন দরে ডিম ও চিনি বিক্রি হবে খোলা বাজারে।

এ সময় এক ব্যবসায়ী মেয়রকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। তেলের সংকট আছে, তাও মিল মালিকের কারণে। তারা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপরিচিত প্রতিষ্ঠানে ২৯ মিলিয়ন ডলার যাওয়ার অভিযোগ অসত্য : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
পরবর্তী নিবন্ধরপ্তানি বাণিজ্যের পালে হাওয়া