উনিশশত বায়ান্ন সালের একুশের চেতনা আমাদের অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিক–নির্দেশক এবং বাঙালি জাতির বারংবার উজ্জীবিত, জাগ্রত আলোকবর্তিকা। একুশ জাতীয় জীবনের প্রতিটি শুভ প্রয়াসের মূর্ত প্রতীক ও জাতির সংস্কৃতির বিকাশ। একুশ বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বগাথা ও প্রেরণার উৎস। একুশ দেশের জাতীয় সংকট ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বজ্রকন্ঠ। একুশ বাঙালির অস্তিত্ব, অসামপ্রদায়িকতা ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। একুশ বাঙালির সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ। একুশের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বাংলার শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতি এবং সৃষ্টি হয়েছে কালজয়ী গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্র। ক্রমাগত বিকাশ লাভ করে চলেছে বাংলার শিল্প–সংস্কৃতির ধারা। একুশের চেতনায় উনিশশত পঞ্চান্ন সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। প্রতিবছর বাংলা একাডেমির আয়োজনে অমর একুশের বইমেলা বাঙালীর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা, গবেষণা ও বিকাশে এ প্রতিষ্ঠান অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। বাংলার গন্ডি পেরিয়ে ‘একুশ’ ঠাঁই করে নিয়েছে মুক্ত আকাশে, এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আজ উজ্জীবিত হচ্ছে সারা বিশ্ব। বাঙালির ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে মহান এক সৃষ্টি একুশ। একুশ একটি অনুভূতি, বৈশ্বিক নিশান ও মহান বিপ্লবের নাম। উনিশশত বায়ান্ন এর একুশে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষার্থে জীবন উৎসর্গের অনন্য এক ইতিহাস একুশ। একুশ বাঙালি জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্বতন্ত্র এক মর্যাদায়, যার চেতনায় উজ্জীবিত আজ সারাবিশ্ব। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি ভাষার মর্যাদাকে যেমন করেছে প্রতিষ্ঠিত, সারাবিশ্বে বাঙালিকে করেছে গর্বিত। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি।