বাংলাদেশের স্বপ্নীল ও আবেগপূর্ণ এক সেতু

| মঙ্গলবার , ৩১ মে, ২০২২ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ুগ

সরকার পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি ‘পদ্মা সেতু’ নামকরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। রোববার সেতু বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে পদ্মা সেতু নামটি চূড়ান্ত করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’এর আওতায় মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়া এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরা প্রান্ত সংযোগকারী পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি সরকার ‘পদ্মা সেতু’ নামে নামকরণ করলেন।’ রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সেতু বিভাগের উপসচিব মো. আবুল হাসানের সই করা গেজেটে আরও বলা হয়েছে, ‘জনস্বার্থে জারিকৃত এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’ এর আগে গত ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা নদীর নামেই সেতুর নামকরণ করা হবে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলেও জানান তিনি। এর মধ্যেই সেতুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। জোরোশোরে এগিয়ে চলছে সেতুকে যান চলাচলের সম্পূর্ণ উপযোগী করার কাজ।

সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই এ প্রকল্প দেশেবিদেশে আলোচিত হয়। এজন্য অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে। বর্তমানে যানবাহনকে ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিতে হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়, পদ্মা সেতুর নাম প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা সেতু’ নামকরণের ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছিল। রিট আবেদনে পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে করার ঘোষণার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর আগেই বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু তৈরির কথা ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে পদ্মা সেতু আজকে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামেই হওয়া উচিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু তার নামে করার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। তাই শেষ পর্যন্ত সেতুটির নাম পদ্মা সেতুই রাখা হলো।

১৮ কোটি মানুষের অপেক্ষায় থাকা এক বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাংলাদেশ নির্মাণ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন সাধের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়, ২০১২ সালের ১০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় সেতুর নির্মাণকাজ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে শুরুতে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সর্বশেষ তা তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়। ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করে এর সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ আরও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

এফবিসিসিআই পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা তাঁর এক লেখায় বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চল সমৃদ্ধির পাদপ্রদীপের নিচে আসার সুযোগ পাবে। অন্তত ৪ কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তা অবদান রাখবে। দেশের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে, বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসাবাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে মোংলাবন্দর ব্যবহার করা যাবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেতু এবং সড়ক চলাচলের জন্য প্রথম নির্দিষ্ট নদী পারাপারের মাধ্যম। এটি বাংলাদেশের স্বপ্নীল ও আবেগপূর্ণ এক সেতু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বধূমপান বর্জন দিবস