বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবার রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা করতে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন–রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসা এমন একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, বাংলাদেশ বিষয়ে রাশিয়া যে বক্তব্য রেখেছে, সেটি তাদের ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার অংশ। সেই মুখপাত্রের বক্তব্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠিয়েছেন ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি। খবর বিডিনিউজের।
তিনি জানান, তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে জাখারোভার ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার বিষয় আমরা জানি। বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। একটি দলের ওপর আরেক দলকে অধিক গুরুত্বও যুক্তরাষ্ট্র দেয় না।
গত বুধবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তাদের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। পরে মাইক্রোব্লগিং সাইট এঙে তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়।
জাখারোভা বলেন, দেশটির আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ‘স্বচ্ছ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক’ করার ছদ্মাবরণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাবিত করার ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রচেষ্টার বিষয় আমরা অব্যাহতভাবে তুলে ধরে আসছি। আমাদের কোনো সন্দেহ নাই যে, বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তা ছাড়াই জাতীয় শাসনতন্ত্রের বিধানমতো ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখের সংসদ নির্বাচন স্বাধীনভাবে আয়োজনের সক্ষমতা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আছে।
অক্টোবরের শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বিরোধীদলীয় এক সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও দাবি করা হয় এই ব্রিফিংয়ে। হাসের এই কার্যক্রমকে ভিয়েনা কনভেনশন না মেনে সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্জলা হস্তক্ষেপ হিসাবেও তুলে ধরেন রুশ কর্মকর্তা।
তিন দিন পর আসে যুক্তরাষ্ট্রের জবাব। তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র এতে বলেন, বাংলাদেশি জনগণ নিজেদের জন্য যেটা চায়, আমরাও তাই চাই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত অবাধ–নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিন্ন লক্ষ্যকে সহযোগিতার অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সরকার, বিরোধীদল, নাগরিক ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভবিষ্যতেও এটি অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশি জনগণের মঙ্গলের জন্যই এই কাজ করা হয়।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাসে ক্রমাগত বক্তব্য দিয়ে আসছে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা দিলে তার জন্য দায়ী ও তাদের স্বজনরা ভিসা পাবে না জানিয়ে আলাদা ভিসা নীতিও ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে রাশিয়া বারবার বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, এটি এই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ৯ জুলাই চট্টগ্রামে এক আয়োজনে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেঙান্দর মতিঁতস্কি বলেন, বাংলাদেশই ঠিক করবে কোন প্রক্রিয়ায় এদেশে নির্বাচন হবে।
র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের জন্য ওয়াশিংটনের নতুন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের দূত মতিতঁস্কি বলেন, কোনো দেশের এককভাবে দেওয়া স্যাংশনকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেয় না। আমরা শুধু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া স্যাংশনকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। এককভাবে কোনো স্যাংশন দেওয়া অবৈধ।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া, চীন ও ভারতের অবস্থান একই। তিনটি দেশই জানিয়েছে, বাংলাদেশে কীভাবে নির্বাচন হবে, সেটি দেশের জনগণের বিষয়। বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপের বিরোধী তারা।