বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর “নারী” কবিতায় নারীদের প্রতি অতুলনীয় সম্মান ব্যক্ত করেছেন যার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে Womenomics শব্দটির মধ্য দিয়ে। ১৯৯৯ সালে Goldman Sach জাপানের ভাইস চেয়ার ক্যাথি মাতসুই তাঁর “How to Nurture Female Employees” নামক গ্রন্থে Womenomics ধারণাটির প্রবর্তন করেন। এই ধারণার মাধ্যমে তিনি নারীকে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
জাপানের অর্থনীতিতে নারী হলো সূর্যের প্রতীক। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে তাঁর Womenomics Theory দিয়ে প্রমাণ করেছেন, একটা দেশের আধুনিক অর্থনীতি গতিশীল রাখতে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। Womenomics মানে হল (Women+ Economics). অর্থাৎ নারী অর্থনীতি। যে অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকা হবে আবশ্যকীয়। অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণে বিশ্ব অর্থনীতির মানচিত্রে গড়ে উঠেছে এক অভিন্ন ইতিহাস। নারীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এই দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অবকাঠামোতে নারী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জাপানের প্রতিটি স্তরে নারী হল অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশের একজন নারী অর্থনীতি গবেষক হয়ে জাপানের অর্থনীতিতে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি দেখে সত্যি বিস্মিত হয়ে পড়ি। অথচ বাঙালী নারী সমাজ ও পিছিয়ে থাকতে চায়না, একটু সুযোগ পেলে বাঙালী নারী ও তার অসীম ক্ষমতায় আসীন হতে পারে।
Womenomics হল এমন একটি তত্ত্ব যার মাধ্যমে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ একটি দেশের অর্থনীতিকে পূর্বাপেক্ষা বেগবান করতে পারে। এই নীতির মাধ্যমে নারীদের তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতা অনুসারে কাজে নিয়োগ দেয়া হবে এবং পাশাপাশি সম্মাননা দেয়া হবে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন জাপান সরকার নারীদের নিয়ে এত ভাবলেন? তার নেপথ্যে কারণ কি? গবেষণা করে জানতে পারলাম জাপানের নারীদের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের পেছনে মূল কারণ জাপানের এউচ বৃদ্ধির হার। যদিও বিশ্বে জাপানের অবস্থান শক্তিশালী দেশের মধ্যে অন্যতম তথাপি জাপানের এউচ বৃদ্ধির হার নিতান্তই কম। এই ধীর প্রক্রিয়া দীর্ঘ ২০ বছর চলমান ছিল যার কারণ ছিল পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব।
জাপান বিশ্বে ২য় বৃহত্তম অর্থনীতি সম্পন্ন দেশ। ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত জাপান বিশ্বের সবচেয়ে বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিগুলির অন্যতম ছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে এসে জাপানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে জাপানের প্রকৃত এউচ বৃদ্ধির হার ছিল (-৪.৮৩) যা নিতান্তই চিন্তার বিষয়। প্রাথমিক দৃষ্টিতে এর অর্থ দাঁড়ায় জাপানী কোম্পানিগুলো তাদের প্রয়োজনমত উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেনা কেননা অপর্যাপ্ত উৎপাদন জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ২০১৩ সালে জাপানে নারী শ্রম শক্তি অংশগ্রহণের হার ছিল ৬৩ শতাংশ যেখানে পুরুষের হার ছিল ৮৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে নারীর অংশগ্রহণের হার ছিল ৫৩.৫৬ শতাংশ যা বিশ্বে ৯৪ তম অবস্থান পেয়েছে।
জাপানের এই ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে ওঠার নিমিত্তে জাপান সরকার দেশের নারী সমাজকে কাজে নিযুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন কেননা দেশের ৪০ শতাংশ নারী। নারীদের কর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধিতে একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদন সম্ভব তেমনি অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়ন ও সম্ভব। এরই ফলশ্রুতিতে Womenomics তত্ত্ব কার্যকর হয়। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় শিনজে আবের Japan must embrace womenomics to modernise economy শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় যেখানে আবে তার Womenomics Theory-র মাধ্যমে নারীকে তুলে ধরেছেন আধুনিক অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে। ২০২০ সালের মধ্যে আধুনিক জাপানিজ অর্থনীতিতে নারী নেতৃত্বকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে Goldman SachÕs Global Investment Research Division এর গরবষকগণ Womenomics 5.0 নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। রিপোর্ট অনুসারে Womenomics theory এর মাধ্যমে একদিকে যেমন জাপানের অর্থনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে , অন্যদিকে দেশের এউচ পূর্বাপেক্ষা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাকে তারা Blue -sky scenario নামে আখ্যা দিয়েছেন। ইতোপূর্বে এই গবেষক দল Womenomics: JapanÕs Hidden Asset(2005), Womenomics 3.0: The Time is Now(2010), এবং Womenomics 4.0: Time to Walk the Talk(2014) নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদন করেন।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করে আমরা দেখতে পাই, বিশ্বে দ্রুত বৃদ্ধির অর্থনীতি সম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের প্রকৃত এউচ বার্ষিক বৃদ্ধি ৮.৩। এই বৃদ্ধির হার বিশ্বে ৩৭তম (GDP Nominal) এবং ৩১তম (GDP PPP)। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের স্থান বিশ্বে ৮ম। বিশ্ব মানচিত্রে এখনো বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকাই অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি কেননা এউচ প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো সীমিত। বাংলাদেশের নারী শ্রম শক্তির হার ৩৬.৩৭ শতাংশ যার স্থান বিশ্বে ১৫৪ তম। যদিও গৌরবের বিষয় ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রকৃত এউচ বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৭৯ যা বিশ্বে ৫ম স্থান অর্জন করেছে যেখানে জাপানের অবস্থান ছিল ১০৫ তম।
জাপান একটি উন্নত রাষ্ট্র হয়েও বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রবৃদ্ধি গত দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এটি গৌরবের বিষয় হলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জাপানের ভূমিকা বিশ্বে অন্যতম। জাপান তার অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি জনিত অপ্রতুলতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষে বদ্ধ পরিকর। তার জন্য নারী শ্রম শক্তির পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিতের লক্ষে এই Womenomics তত্ত্ব বিশ্বে উন্মোচন করল। অথচ বাংলাদেশে প্রচুর শ্রম শক্তি থাকা সত্ত্বে ও দেশটি নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণের হার নিয়ে সচেতন নয়। Womenomics তত্ত্ব প্রয়োগের মাধ্যমে জাপানের মতো বাংলাদেশেও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কার্যকর হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে জাপান সুনিশ্চিত করেছে। এই দেশের আইনশৃঙ্খলা এতটাই নিরাপদ যে একজন নারী ইচ্ছে করলে যে কোনো সময়ে যে কোনো বয়সে নিজেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে পারেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা, চাকরি, গবেষণা আর সৃষ্টিশীল জগৎ সব ক্ষেত্রে জাপানী নারীর অংশগ্রহন লক্ষ্য করা যায়। জাপানে যে কোন বয়সের নারীরা তাদের দক্ষতা অনুযায়ী যেকোনো কাজ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, একজন যদি তার স্থায়ী চাকরী থেকে অবসর নেয়, সে ইচ্ছে করলে খণ্ডকালের চাকরি করতে পারবে। এখানে খণ্ড সময়ের চাকরিগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়। কারণ শিক্ষার্থীসহ নারী ও অবসরপ্রাপ্তরা তাদের শারীরিক পরিশ্রম দিয়ে ঘণ্টা হিসেবে কাজ করতে পারে। সবার জন্য সমান সুযোগসুবিধা রয়েছে। জাপানে একজন নারী তার সংসারের কাজ সেরে অবসরে ইচ্ছে মতো সময় বেছে নিয়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজেকে অর্থনীতিতে ও উন্নয়নে সম্পৃক্ত রাখতে পারেন। জাপানে আধুনিক অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনে যেন সমগ্র জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত। আর এটা কেবল জাপানেই সম্ভব। কারণ জাপানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা ও কাজের প্রতি সম্মান। কে কি কাজ করে সেটা কোনো ব্যাপার নয়। বরং কে কতটুকু কাজ করে বা করতে পারে সেটাই ব্যাপার। এই দৃশ্য একজন বাংলাদেশি হিসেবে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কারণ এই আধুনিক সময়েও নারীর প্রতি বাংলাদেশের সামাজিক ধারণা খুব নিম্নমানের ও বৈষম্যমূলক।
বাংলাদেশে শিক্ষানীতি সমপ্রসারণের ফলে এখন মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, কেউ কেউ উন্নত দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু যখন আমরা বাস্তব প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করি তখন দেখা যায় নারীদের চাইতে পুরুষের মেধা, মনন, চিন্তা, আর দক্ষতার মান বেশি দেয়া হয়। যোগ্য নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীদের চেয়ে পুরুষদের প্রাধান্য বেশি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নারীর প্রতি সঠিক ধারণা তৈরি হতে আরও অনেক বেশি সময় লাগছে। বাংলাদেশে শ্রমজীবী নারীরা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন খাতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান এসব খাত গুলোর যদি অর্থনৈতিক মূল্য স্বীকার করে শ্রমের স্বীকৃতি পূর্বক মজুরি প্রদান করা হয় তাহলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। বাংলাদেশের শহুরে এবং গ্রামীণ নারীরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শ্রম শক্তিতে অবদান রাখছে। গ্রামীণ নারীরা খেতে, খামারে, গৃহে প্রচুর শ্রম দেয়। যার হিসেব নগণ্য। নারীর প্রতিটি গৃহকমের্রও অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো নারীর মর্যাদা রক্ষায় সোচ্চার নয়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার বদৌলতে প্রাচীন ধ্যান ধারণার কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো নারী সমাজ পিছিয়ে। দেশের সরকার নারী উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুরুষ শাসিত সমাজকেও নতুন ভাবনা নিয়ে নারীকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। এভাবে বৈষম্য যেমন কমে যাবে, দেশের অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়ন ও সম্ভবপর হবে। বাংলাদেশ সরকার নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অনেক নীতিমালা প্রবর্তন করেছেন। সামপ্রতিক বাজেট এ নারী খাতে অর্থায়নে ও মনোনিবেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো ঝউএ লিঙ্গ সূচকে বাংলাদেশের স্থান দক্ষিণ এশিয়ার সর্বনিম্নের দেশ পাকিস্তান এর আগে রয়েছে। তাই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নারীর কর্মসংস্থানে সুযোগ বাড়ছে কিন্তু এখনো বাংলাদেশের লিঙ্গ বৈষম্য লক্ষণীয়। তাই এই বৈষম্য দূরীকরণে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে হবে জাপানের Womenomics policy অনুসরণ করে।
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারী, পুরুষ, সকলের যৌথ অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। এর জন্য প্রয়োজন অংশগ্রহনের মনোভাব এবং পরিবেশ। নিরাপদ পরিবেশ, সৃষ্টিশীল কর্মক্ষেত্র, সুষ্ঠু বেতন-ভাতা প্রদান ব্যবস্থা প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর কাজের স্পৃহা বাড়িয়ে তোলে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক ন্যায় বিচার ও সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশ এবং ধর্মীয় সহনশীলতাও এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ যদি তার বহুল জনসংখ্যা কে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে তবে একদিন বাংলাদেশও বিশ্বের মানচিত্রে উন্নত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বৈশ্বিক পরিবর্তনের স্রোতধারায় বাংলাদেশ আজ অনেক এগিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন, নগরায়ন, বৈশ্বিক বিভিন্ন উপাদানসমূহ, জনসাধারণের সামাজিক মর্যাদাবোধ, সচেতনতা এবং শিক্ষার প্রসার মানুষকে আত্মসচেতন করে তুলছে। তাই বাংলাদেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অবস্থান ও সুদৃঢ়। শহর এবং গ্রামাঞ্চলে নারীরা তাদের নিজ নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে কাজ করে চলেছে। এই চিত্র গৌরবের মনে হলেও এইসব কর্মস্থলে নারীদের নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় এখনও। নারী সাংবিধানিক ভাবে কাজের স্বীকৃতি পেলেও নারীকে এখনো তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে অসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা নিজেদের মেধা মননের মাধ্যমে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও সামাজিক পারিপার্শ্বিকতার কারণে নারী প্রকৃত মর্যাদা, স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশে নারী ও নারী উন্নয়ন সম্পর্কে আর্থসামাজিক ধারণা এখনো গভীর অন্ধকারে। মানুষের প্রতি মানুষের সঠিক আচরণ, চিন্তাচেতনার বিকাশ, মানবিক মূল্যবোধ ও পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধের চর্চা আমাদের দেশের জীবন ও সংস্কৃতিতে বিরল। এখনও নারী যেন শুধু বংশ রক্ষার নিমিত্তেই সৃষ্টি হয়েছে। নারীর পরিচয় শুধুমাত্র কন্যা, জায়া, আর জননীতে সীমাবদ্ধ নয় এই বোধটুকু নারীর মাঝে জাগিয়ে তুলতে হবে। প্রতিটি নারী তার অনন্য গুণে গুণান্বিত। একজন শিক্ষিত মা যেমন একজন শিক্ষিত সন্তান জন্ম দিয়ে শিক্ষিত সমাজ গড়তে পারে, তেমন একজন শিক্ষিত নারী একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধুমাত্র চাই সুষ্ঠু পরিবেশ, নারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
নারীর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ কোনো সভ্য সমাজের মানুষ করতে পারে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সর্বস্তরের জনগণকে এক হয়ে নারীদের সমর্থনে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি কর্মস্থল যাতে নারী বান্ধব হয় সেদিকে যথাযথ দৃষ্টি দিতে হবে। একটি দেশ উন্নত হতে হলে সেই দেশের নারীদেরও অর্থনীতিতে সমান ও যোগ্য সম্মানজনক সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তাই বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে Womenomics একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। শেষ করব একজন নারীবাদী লেখিকা Mary Wollstonecraft এর কিছু কথা দিয়ে- Women are not sexual being for men’s pleasure, rather they are rational human beings and that is why they deserve equality and rights.
লেখক : পিএইচ ডি গবেষক, অর্থনীতি বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়