১৯৯৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ খেলা। এরপর ২০০০ সালে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় সুখবরটি। তা হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদাবান পরিবারের সদস্যভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এরপর একে একে কেটে গেছে ২৫টি বছর। পালিত হচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা লাভের ২৫ বছর পূর্তি। রাজশাহী এবং সিলেটের পর গতকাল চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হলো টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির ২৫ বছর পূর্তি। সাগরিকাস্থ বীরশ্রেষ্ট ফ্লাইট লেফটেনেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সকালে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানমালা চলে বিকেল পর্যন্ত। অনুষ্ঠানমালায় ক্রিকেট কার্নিভ্যালে অনূর্ধ্ব–১২ বালক–বালিকাদের সিক্স এ সাইড ক্রিকেট। ছিল গতিময় বোলারের সন্ধান। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও ছিল শিশু–কিশোরদের। সকালে প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) শারমিন জাহান, বিসিবির সাবেক প্রধান নির্বাচক নাজমুল আবেদিন নান্নু, সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বশর সুমন, বাংলাদেশ নারী দলের ক্রিকেটার রোমেনা আহামেদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এ্যাডহক কমিটির সদস্য শাহনেয়াজ রিটন।
নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্যে সবচাইতে আকর্ষণীয় ছিল অনূর্ধ্ব–১২ বাচ্চাদের সিক্স এ সাইড ক্রিকেট। ছেলে এবং মেয়ে মিলে মোট ১২টি দলের হয়ে ৯৬ জন ক্ষুদে ক্রিকেটার অংশ গ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতায়। ১২টি নদীর নামে নামকরণ করা হয় দলগুলোকে। যেখানে বালক বিভাগে হালদা চ্যাম্পিয়ন আর মেঘনা রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বালিকা বিভাগে কর্ণফুলী চ্যাম্পিয়ন এবং যমুনা রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। এই ক্রিকেট কার্নিভ্যালের এক পর্যায়ে মাঠে হাজির হন চট্টগ্রামে অনুশীলনরত জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। যাদের মধ্যে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলি রাব্বি এবং পারভেজ হোসেন ইমন। এদের দেখে ক্ষুদে ক্রিকেটারার যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মত অবস্থা। তাসকিন তো অটোগ্রাফ দিতে দিতে হয়রান। একেবারে নির্মল আনন্দেই যেন কাটল ক্ষুদে ক্রিকেটারদের সময়টা।
অনুষ্ঠানের আরেক আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল পেসার হান্ট। প্রায় শতাধিক পেসার অংশগ্রহণ করে এই প্রতিযোগিতায়। যাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল যত বেশি গতি তোলা যায়। সেখানে ১৩৪ কিলোমিটার গতিতে বল করে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে নাঈম এবং হাবিব। ১৩১ কিলোমিটার গতিতে বল করে যৌথভাবে দ্বিতীয় হয়েছে ইব্রাহিম খলিল এবং শাকিল। ১২৯ কিলোমিটার গতিতে বল করে যৌথভাবে তৃতীয় হয়েছে নাজমুল হাসান এবং ফরহাদ। তাদের সবাইকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া আরেকটি ইভেন্ট ছিল হিট দ্য স্টাম্প। যেখানে প্রথম হয়েছে আবির হোসেন, দ্বিতীয় হয়েছে আবদুল কাদের শুভ এবং তৃতীয় হয়েছে সামিউল আরেফিন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এবং ক্রিকেট শিরোনামে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে তিন বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ৯ জন। প্রথম থেকে চতুর্র্থ শ্রেণির প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে জয়না সরওয়ার কোরাইশী। দ্বিতীয় হয়েছে সম্পৃক্তা নাথ। তৃতীয় হয়েছে মরিয়ম আনিশা। পঞ্চম থেকে ১০ম শ্রেণির প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে অর্পা দত্ত। দ্বিতীয় হয়েছে মাইমুনা আফরীন। তৃতীয় হয়েছে তাবাসসুম আনজুমা তানহা। একাদশ থেকে তদুর্ধ্ব প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে আনিকা সুলতানা। দ্বিতীয় হয়েছে সৈয়দা ফারহানা তাসলিম। তৃতীয় হয়েছে রিপন দাশ।
মাঠের একপাশে একটি কমেন্ট্রি বঙ তৈরি করে লাইভ কমেন্ট্রি করানো হয়। সেখানেও পুরস্কার দেওয়া হয়। কমেন্ট্রি প্রতিযোগিতায় দুজনকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া ক্ষুদে ক্রিকেটার এবং ক্রিকেটারদের যেসব অভিভাবক এসেছিলেন মাঠে তাদের জন্যও ছিল আকেটি সেশন। যেখানে তাদের সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দুই সাবেক অধিনায়ক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং হাবিবুল বাশার সুমন। ক্রিকেট বিষয়ে এ দুজন একেবারে খোলামেলা আলোচনা করেন অভিভাবকদের সাথে। যেহেতু এখন বেশিরভাগ অভিভাবকই চান তার সন্তান একজন ক্রিকেটার হোক; আর সেক্ষেত্রে একজন অভিভাবকের কি ভূমিকা সেটা জানিয়ে দেন নান্নু এবং সুমন। বিকেলে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দিনব্যাপী এই নানা অনুষ্ঠানমালা।
বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবির চিফ প্রোগ্রাম কো–অর্ডিনেটর মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বিসিবির বয়স ভিত্তিক প্রোগ্রামের প্রধান হাবিবুল বাশার সুমনসহ বিসিবির কর্মকর্তারা। বলা যায় দিনব্যাপী দারুন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আমেজে কেটেছে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা লাভের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব।