বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় তুরস্ক। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তুরস্ক সরকারের এই আগ্রহের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কভসগ্লু। অন্যদিকে জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে তুরস্কের সম্পৃক্ততা আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফররত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে তিনি এই আহ্বান জানান। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগের জন্যও তুরস্কের প্রতি আহ্বান জানান।
ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের বিশাল আঞ্চলিক বাজার এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে এর বিশাল বাজার রয়েছে। তুরস্ক এখানে বিনিয়োগ করলে উভয় দেশই তাতে লাভবান হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে তুরস্কের আগ্রহের কথা জানিয়ে সফররত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মূল্য দেয়। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য যা কিছু করার তার দেশ সেটা করবে। জ্বালানি থেকে পর্যটন সব খাতেই তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে বলে জানান দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের ভয়াবহ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ মেরামত করে দেওয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর মাস মার্চে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বাংলাদেশ সফর করতে পারেন বলে জানান সফররত দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তুর্কি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেখ হাসিনা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি।
অস্ত্র বিক্রির আগ্রহ তুরস্কের : অন্যদিকে বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির পাশাপাশি বাণিজ্য দ্বিগুণ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তুরস্ক সরকারের এই আগ্রহের কথা তিনি তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তুর্কি মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশে বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন করার লক্ষ্য ঠিক করেছি। গত বছর বাংলাদেশে আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য না কমায় তারা ‘খুশি’। এ কারণে আমরা আশাবদী, অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে সাবুসোলু বলেন, আমি আমাদের সামরিক সরঞ্জামের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আলোকপাত করেছি। এক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম সারিতে আছি আমরা। প্রতিযোগিতামূলক দাম এবং কোনো ধরনের পূর্বশর্ত নাই। আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশ এই সুযোগের ব্যবহার করবে। সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে এক প্রশ্নে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যৌথ উৎপাদন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে কাজ করে থাকে তুরস্ক। এখন আমরা যা উৎপাদন করছি তার ৭০ শতাংশের বেশি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। তবে আমরা এক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করেছি। আমরা আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও প্রযুক্তি ভাগাভাগি করি। আমরা বাংলাদেশসহ অন্যদের সঙ্গেও এ প্রযুক্তি ভাগাভাগি করে নিতে রাজি। দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবুসোলু। ঢাকায় তুরস্কের নতুন দূতাবাস ভবনেরও উদ্বোধনের কর্মসূচি রয়েছে তার।