জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ তার কর্মজীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মানের বিষয়। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাতে তিনি এই অনুভূতির কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোয়েন লুইস বৈঠকে বাংলাদেশে তার দায়িত্বকালকে অত্যন্ত স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি অধ্যাপক ইউনূসের সামপ্রতিক নিউ ইয়র্ক সফরের প্রশংসা করেন এবং বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে তার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত সফল। খবর বিডিনিউজের।
গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ সফরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বৈচিত্র্যময় গঠন জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, যেখানে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, বৈঠকে টেকসই সহযোগিতা, উদ্ভাবন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ যে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন এবং উন্নয়নের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে বিষয়েও কথা হয়। গোয়েন লুইস বলেন, গত সাড়ে তিন বছর বাংলাদেশের মানুষের সেবা করতে পারা আমার কর্মজীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মানের বিষয়। তিনি বলেন, এই জাতির সহনশীলতা, সৃজনশীলতা ও উদারতা আমি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। সরকার, নাগরিক সমাজ ও উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা ছিল গভীরভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।
গোয়েন লুইস প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক উদ্ভাবন ও সমতার প্রতি আজীবন আত্মনিয়োগের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে। তার নেতৃত্ব বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বিষয়ে বৈশ্বিক চিন্তাভাবনাকে নতুনভাবে রূপ দিচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোয়েন লুইসের মেয়াদকালে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো বাস্তবায়নে কাজ করেছে, যা দেশের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই কর্মসূচিগুলো পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকারে কেন্দ্রীভূত ছিল। সেগুলো হল– অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ন্যায্য মানবিক কল্যাণ, পরিবেশগত স্থিতিস্থাপকতা, অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা ও লিঙ্গ সমতা।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, গোয়েন লুইসের সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) নতুন মিশনের উদ্বোধন, যা মানবাধিকার খাতে জাতিসংঘের উপস্থিতি শক্তিশালী করেছে এবং অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গভীর করেছে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতিতে সহায়তা করেছে এবং শ্রম, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সংস্কার কার্যক্রমে অবদান রেখেছে।
গোয়েন লুইস বাংলাদেশের বৈশ্বিক নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, সবার জন্য আগাম সতর্কতা, শিক্ষা রূপান্তর এবং খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের অংশীদারত্ব অভিন্ন মূল্যবোধ এবং একটি সমৃদ্ধ, জলবায়ু–সহনশীল ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ– কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, এবং আমাদের সব প্রচেষ্টায় লিঙ্গ সমতা ও মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত থাকবে।