বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্র করোনার ভ্যাকসিন দেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে একথা জানান তিনি। বৈঠককালে কেরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আমেরিকা মধ্য গ্রীষ্মের মধ্যেই ভ্যাকসিনের চাহিদা পূরণ করবে। এরপর বাংলাদেশকে তারা কোভিড ভ্যাকসিন দিতে পারবে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ব্রিফিংয়ে জানান, জন কেরির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্যারিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসায় জলবায়ু কূটনীতিতে নতুন গতি তৈরি হবে। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ২২-২৩ এপ্রিল আয়োজিত ক্লাইমেট লিডার্স সামিটে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জন কেরিও আমন্ত্রণটি গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে বিশেষ দূত জন কেরি দূষণের ঝুঁকি হ্রাসে জলবিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরশক্তির মতো বিকল্প শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন। কেরি বলেছেন, মার্কিন সংস্থাগুলো অন্যদের সঙ্গে অংশীদার হয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, ওবামা প্রশাসন গ্রিন জলবায়ু তহবিলকে এক বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। তবে বর্তমান প্রশাসন ১শ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। কেরি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক ভিত্তিতে দ্বিপাক্ষিক বা ত্রিপক্ষীয় উপায়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী। তিনি বলেন, দেশে ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন সৌর বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। সেচের জন্য সৌরশক্তি প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে তার সরকার অন্য উদ্যোগের পাশাপাশি জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল গঠন করেছে। এছাড়াও সরকারি উদ্যোগে ইতোমধ্যে সারা দেশে প্রায় ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন চারা রোপণ করা হয়েছে এবং বেসরকারিভাবে আরো এক কোটি চারা রোপণ করেছিলেন। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জন কেরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন প্যারিস চুক্তির আলোকে আবারও বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে চায়। ভবিষ্যতের সেই প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ, ভারতসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণও আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুভেচ্ছা বার্তা দিয়ে কেরি সংবাদ সম্মেলনের শুরু করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অনুরোধে আমি এখানে এসেছি। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আবার প্যারিস এগ্রিমেন্টের বাস্তবায়নের নেতৃত্বে ফিরে এসেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, আমাদের নাগরিক এবং দেশগুলোকে সুরক্ষার জন্য এসব প্রচেষ্টা। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা কোনো একক দেশ সমাধান করতে পারবে না। সঙ্কট যে আছে এ নিয়ে কোনো দেশের কোনো সন্দেহ নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন দুর্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরে মানব ইতিহাসের কঠিন দিন, কঠিন সপ্তাহ, মাসগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমরা। বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট দুর্যোগ দেখেছি। ভাইরাস, খরা, সমৃদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু দেখছি। ইতোমধ্যে জলবায়ুর কারণে মানুষ বাস্তচ্যুত হয়ে অন্যত্র যাওয়া শুরু করেছে। বিজ্ঞানের শিক্ষা থেকে আমরা জানতে পেরেছি সবাইকে এক সাথে কাজে নামতে হবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বড় অর্থনীতির দেশ ও অংশীদারদের নিয়ে সামিট আহ্বান করেছেন। আলোচনার মাধ্যমে যাতে পরিস্থিতি মোকাবেলার রাস্তাগুলো তৈরি করা যায়, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলার প্রযুক্তিগুলো সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়া যায়। প্রযুক্তি, গবেষণা, উন্নয়ন, আর্থিক বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার জন্য এই সম্মেলন খুবই কার্যকর হবে।
তিনি আরো বলেন, দূষণ মুক্ত বাতাস, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কম হওয়া, ক্যান্সার নির্মূল করা, লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিওএনার্জির জন্য প্রযুক্তির সংযুক্তি- এসবের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিকল্পনা হচ্ছে দুই ট্রিলিয়ন ডলারের। এর মাধ্যমে ২০৩৫ সালের মধ্যে আমাদের বিদ্যুৎ খাত জিরো কার্বনে ফিরে আসবে, ৫ লাখ ইলেক্ট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে। ফলে জনগণ ইলেক্ট্রিক কার কিনতে পারবে, সাচ্ছন্দে চার্জ দিতে এবং নিজের কর্মস্থলে যেতে পারবে।