শিক্ষা উপমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, “মাইক একটা নিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন বললাম সেটা গণতন্ত্র নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সর্বত্র একটা চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এই বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে অনেক অস্ত্র ব্যবসায়ীর অনেক লাভ হবে। তারা এখানে অস্ত্র ব্যবসা করবে।”
আজ শনিবার (২৮ নভেম্বর) নগরীর চান্দগাঁওয়ে এফআইডিসি সড়কের পাশে সিটি করপোরেশনের ১১ একর জমিতে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বিডিনিউজ
একটি চক্র বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মন্তব্য করে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, “তাদের এই ফাঁদে পা দিয়ে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মতো হতে দেওয়া হবে না।”
তরুণদের মারমুখী না হয়ে আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তির মাধ্যমে ‘পরাজিত শক্তির’ উত্থান ঠেকানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক যে সমাজের স্বপ্নের ভিত্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল তা ভুলুণ্ঠিত হলে কোনো বিনিয়োগের সুফলই মিলবে না বলেও সতর্ক করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “সকল পর্যায়ে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে সংবিধানে নির্দেশিত মূল নীতিগুলোর চর্চা ও প্রচারণা আমাদের করতে হবে। জাতির পিতা যে একটা সহনশীল সমাজ সৃষ্টি করার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখিয়ে বাঙালির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছেন সেই আদর্শগুলো যদি আজকে ভুলুণ্ঠিত হয় তাহলে কোনো বিনিয়োগের সুফল আমরা পাব না।”
তিনি বলেন, “যদি আমরা এই বিষয়টাকে আমাদের তরুণদের মধ্যে আনতে না পারি তাহলে অরাজকতা অস্থিতিশীলতা হানাহানি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এই বাংলাদেশ ভরে যাবে। যারা আজকে ধর্মের নামে রাজনীতি করছে, যারা এটা করছে তারা আমাদের যুব সমাজকে অন্ধকারের পথে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের নারী সমাজকেও নানাভাবে মস্তিষ্কে অনেক কিছু ঢুকিয়ে দিতে চায়। তাদেরকে পিছিয়ে রাখতে চায়। আমরা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান হতে দিব না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বাংলাদেশ করব। সেখানে আমাদের সমৃদ্ধি হবে। সেখানে সহনশীলতা থাকবে, শান্তি থাকবে।”
তিনি বলেন, “শুধু পয়সা ইনকাম করলেই শান্তি হয় না। পৃথিবীর অনেক দেশে অনেক সম্পদ আছে কিন্তু স্থিতিশীলতা না থাকলে, সদ্ভাব না থাকলে, বৈষম্য থাকলে শান্তি আসে না। যুব সমাজের প্রতি আহ্বান, মারমুখী হওয়ার দরকার নেই। আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তি দিয়ে এই পরাজিত শক্তির উত্থান আমরা করতে দিব না। আমরা নিজেদের শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে নিজেদের মতো আশেপাশের সবাইকে উন্নত করব।”
তরুণদের উদ্দেশে নওফেল বলেন, “আমাদের অর্থনীতিতে লক্ষ লক্ষ দাপ্তরিক চাকরি দেওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র দিতে পারছে না কিন্তু আমাদের লক্ষ লক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে। এই লক্ষ লক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের মানসিকতা পরিবর্তন করে যে সম্ভাবনার দুয়ার শেখ হাসিনার সরকার খুলে দিয়েছে সেই সুযোগ নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার চট্টগ্রামবাসীর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এক অনন্য উপহার। এই প্রকল্প মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের ব্রেইন চাইল্ড। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্ব দূর হবে, একই সাথে তথ্যপ্রযুক্তিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক রকম উল্লম্ফন সৃষ্টি হবে। আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার থেকে বের হয়ে তরুণ উদ্যোক্তারা আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে যেন ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে একই জায়গায় একটি হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজও শিগগিরই শুরু হবে।”
তিনি বলেন, “চুয়েটে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। অন্যদিকে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দর নগরী ও দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম আইটি বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “চট্টগ্রামে এতদিন গতানুগতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করে আইটি ইন্ডাস্ট্রিতেও এখন চট্টগ্রামবাসীর অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো।”
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেন, “চট্টগ্রামের উন্নয়নে আইসিটি বিভাগ থেকে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম দেশের সেরা ডিজিটাল সিটি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, নাটোর, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, বরিশাল ও মাগুরায় স্থাপন করা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার।
সরকারি অর্থায়নে প্রায় ৫৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ, প্রকল্প পরিচালক মো. মোস্তফা কামাল, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনসহ বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।