রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরবর্তী সময়ে ‘কল্লোল যুগে’ যাঁরা সাহিত্য জগতে বিশেষ আলোড়ন তুলেছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁদেরই একজন। মূলত গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতিমান অচিন্ত্যর সৃষ্টিতে অতি আধুনিকতার প্রভাব সুস্পষ্ট। আর এর মধ্য দিয়েই তিনি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য হয়েছেন। ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামেও লিখেছেন তিনি। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের জন্ম ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নোয়াখালিতে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ ও বি.এল ডিগ্রি নিয়ে মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা তাঁর। পরবর্তীকালে জেলা-জজ হন। চাকরিসূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন, আহরণ করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তাঁর কোনো না কোনো রচনায় এর সার্থক রূপায়ন ঘটেছে। অচিন্ত্যর লেখায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণি – তাদের জীবনধারা। গল্প ও উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা ও জীবনীগ্রন্থ রচনায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া ‘কাকজ্যোৎস্না’, এবং ‘প্রথম কদম ফুল’ তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি উপন্যাস।
গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অকাল বসন্ত’, ‘যতনবিবি’, ‘হাঁড়ি মুচি ডোম’ ইত্যাদি। ছোটগল্পগুলোতে লেখক নিপুণভাবে এঁকেছেন সমাজ জীবনের নানা চালচিত্র। কবিতায়ও তিনি অনবদ্য। ‘আমরা’, ‘প্রিয়া ও পৃথিবী’, ‘নীল আকাশ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে তাঁর রোম্যান্টিক ভাবালুতার পাশাপাশি গণমুখী চেতনার প্রভাবও প্রতীয়মান। স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘কল্লোলযুগ’ সুখপাঠ্য একটি রচনা। চারখণ্ডে রচিত রামকৃষ্ণের জীবনী ‘পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ’ গ্রন্থটিও চমৎকার। ১৯৭৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত প্রয়াত হন।