বাঁশখালীতে ২ জন নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা

পারিবারিক বিরোধ

বাঁশখালী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২১ অক্টোবর, ২০২১ at ৯:০৭ অপরাহ্ণ

বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া এলাকায় পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে নিহত আব্দুল খালেকের (৩০) মা ও নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর (২৫) দাদী মমতাজ বেগম।

পুলিশ এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত চার আসামিকে আটক করেছে।

গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে সংঘটিত এ ঘটনায় নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর বাবা মো. কামাল উদ্দিনসহ আরো দু’জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার দুপুরে বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া বাজারের পাশে বাড়ির পানি নিষ্কাশন করার জন্য পাইপ লাইন ঠিক করতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয় আব্দুল খালেক(৩৪)। তাকে গুরুতর জখম করলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসা সুলতান মাহমুদ টিপু ও তার পিতা মো. কামাল উদ্দিনও হামলার শিকার হন।

আহতদের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আনা হলে আব্দুল খালেককে মৃত ঘোষণা করেন বাঁশখালী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক।

আশংকাজনক অবস্থায় সুলতান মাহমুদ টিপু, তার পিতা মো. কামাল উদ্দিন সহ আরো দুইজনকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে বুধবার রাতে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে সুলতান মাহমুদ টিপু। নিহত আব্দুল খালেক ও সুলতান মাহমুদ টিপু সর্ম্পকে চাচা-ভাতিজা।

এ ঘটনায় নিহত আব্দুল খালেকের মা ও নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর দাদী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ১০ জনকে জ্ঞাত এবং ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ঘটনার পর কাছিম আলীর দুই পুত্র মো. বাহাদুর (৩৩) ও মঞ্জুর আলম (৪০), মৃত নাগু মিয়ার পুত্র জাকের হোছন (৪৮) এবং মৃত শফিকুর রহমানের পুত্র মো. ছিদ্দিককে(৫২) আটক করেছে।

অপরদিকে, ঘটনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মো. রাসেল তার পিতা মো. ছিদ্দিক (৫২) জড়িত নয় অজুহাতে ফেসবুক লাইভে থানার সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে বিষপান করে।

বিষপানের পর তাকে প্রথমে বাঁশখালী হাসপাতালে নেয়া হলেও বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দায়ের করা হত্যা মামলায় ১০ জন জ্ঞাত আসামির মধ্যে মো. রাসেল ৪নং এবং তার পিতা মো. ছিদ্দিক (৫২) ৮নং আসামি।

জানা যায়, ঘটনায় নিহত আব্দুল খালেক একটি ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে।

অপরদিকে, নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর এক পুত্র সন্তান রয়েছে।

ঘটনার পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির সহ পুলিশের উধর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দীন বলেন, “বুধবার দুপুরে পারিবারিক বিরোধের কারণে দক্ষিণ জলদী মনছুরিয়া এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় আব্দুল খালেক নামে একজনের ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। সুলতান মাহমুদ টিপু নামে অন্য একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে বুধবার রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল খালেকের মা ও নিহত সুলতান মাহমুদ টিপুর দাদী মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ১০ জনকে জ্ঞাত এবং ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে চার আসামিকে আটক করা হয়েছে, বাকিদের আটকের প্রচেষ্টা চলছে।”

নিহত আবদুল খালেক ও সুলতান মাহমুদ টিপুর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নিজ এলাকায় পৌঁছালে পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। পরে মনছুরিয়া কমপ্লেক্স এলাকায় মনছুরিয়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহ আলম পৃথক দু’টি জানাযা পড়ান।

জানা যায়, জানাযার পূর্বে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, শীলকূপের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার, পৌরসভা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. হামিদ উল্লাহ, শাহাদত হোছাইন আজগর সহ কয়েকজন বক্তব্য রেখে খুনীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে পলাতক আসামি রোহিঙ্গা যুবক গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুক লাইভে গিয়ে কিশোরীর আত্মহত্যা