রামু থেকে কক্সবাজার সদর উপজেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে বাঁকখালী নদী। এই সমৃদ্ধ করে তোলা নদীটি বর্ষায় ভয়ানক রূপ নিয়েছে। নদীর রামু অংশে চলতি বর্ষায় ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে কয়েকশ বসতি। আরো শত শত বসতি ভাঙনের মুখে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনসহ নানা কারণে গতিপথ বদল হওয়ায় জনপদ গিলে খাচ্ছে নদীটি। নদীর আগ্রাসন রোধ করে বসতি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দল। ভুক্তভোগী মাস্টার আমীর হোসাইন বলেন, আমার বাড়ি রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নে। বাড়ির সামনে এলজিইডির নির্মিত সড়ক। নদীর স্রোত ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কারণে নদীর গতিপথ বদলে সড়কের অধিকাংশ স্থান বিলীন হয়ে গেছে চলতি বর্ষায়। এখন ভিটে–বাড়িগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। নদীর পাশের থোয়াঙ্গার কাটা, মাঝিরকাটা, ক্যাজরবিলসহ বেশ কিছু এলাকায় বহু বসতি বিলীন হওয়ার পথে। বসতিগুলোর বাসিন্দারা এখন প্রতিনিয়ত ভাঙনের আতঙ্কে দিন যাপন করছেন। সরেজমিনে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজরবিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের ফলে কবরস্থান ও বেশ কয়েকটি বাড়ি বাঁকখালী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কের পাশে একমাত্র শত বছরের পুরানো মসজিদটিও বিলীন হতে চলেছে। নদীর ঢলের আগ্রাসনে যে কোনো সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে অসংখ্য ভিটেবাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁকখালী নদীর ভাঙনের ফলে ওই এলাকার বাড়িঘর যে কোনো মুহূর্তে নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। মসজিদের অর্ধেক নদীতে তলিয়ে গেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লোকজন। তারপরও সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দোছড়ি এলাকার মাস্টারপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকায় প্রায় দুইশ পরিবারের বসবাস রয়েছে। নদী ভাঙনের ফলে এই ইউনিয়নের দুটি ঐতিহ্যবাহী এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। প্রবল বর্ষণে নদী ভাঙনের ফলে মাস্টারপাড়া, পশ্চিমপাড়া এলাকায় নদীভাঙনে সড়ক ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙন দ্রুত সমাধান করা না হলে এলাকাবাসী বাস্তুচ্যুত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাশেম বলেন, আমার বাড়ির উঠান নদীতে চলে গেছে। বর্তমানে বাড়ি থেকে কয়েক ফুট অদূরে নদী। আমরা নিজেরাই কোনো ব্যবস্থা করার জন্য এলাকাবাসী এক হয়ে কাজ করে কোনোরকমে ভাঙন ঠেকিয়ে রেখেছি। এই ভাঙন দ্রুত সমাধান করা না হলে এলাকাবাসী বাস্তুচ্যুত হবে। তাই দ্রুত উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা কামনা করছি। গর্জনিয়ার বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ভাঙন চলছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু এই বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এবার যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে পরিস্থিতিও ভয়াবহ রূপ নেবে। কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তৈয়ব উল্লাহ বলেন, অসাধু লোকজন নদী থেকে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন করছে। এই বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ বদলে ভয়াবহ ভাঙন হচ্ছে। ভাঙন রোধ করে বসতি রক্ষায় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বাঁকখালী নদী এই বর্ষায় বেশ ভয়ানক রূপ নিয়েছে। সমপ্রতি হওয়া প্রবল বর্ষণে নদীতে বিস্তীর্ণ স্থানে ব্যাপক ভাঙন সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে গর্জনিয়া–কচ্ছপিয়া এলাকায় ভাঙন বেশি। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। আরো বেশকিছু বসতি ঝুঁকিতে রয়েছে–তা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি দ্রুত একটি ব্যবস্থা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটি দল ভাঙন পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। তাদের প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ্য করে মন্ত্রাণলায়ে চিঠি দেবো। অনুমোদন পেলে বর্ষায় অন্তত অস্থায়ীভাবে কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।