বা ং লা দে শে র ফ ল

আশফাক হোসেন | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। বিরাট আকৃতির ওই ফল সবারই খুব প্রিয়। এর রং এবং স্বাদ গন্ধ সকলে পছন্দ করে। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। ফলের বীজ রান্না করে খাওয়া হয় এবং বেশ পুষ্টিকর। গাছের পাতা ভাল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছের ডগায় সরু ডাল থেকে শুরু করে মাটির নিচে শিকড়ে অনেক সময় ফল ধরতে দেখা যায়। কাঁচা ফল থেকে আচার তৈরি করে সংরক্ষণ করা হয়। পাকা ফলের কোয়া খুব সুস্বাদু, সুমিষ্ট এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর। যার ফলে এ ফল কেউ বেশি খেলে পেটে সহ্য হয় না। কবি সাহিত্যিকদের অনেক লেখায় আমরা কাঁঠালের কথা পাই।

কাঁঠাল বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের অতি আদিম ফল। মালয় এবং ব্রাজিলেও কাঁঠাল জন্মে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলে কাঁঠাল জন্মে। ঢাকা অঞ্চলের নরসিংদি, ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়, সিলেট অঞ্চলের মৌলবীবাজার, হবিগঞ্জ এবং টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, যশোহর, কুষ্টিয়া, রাঙ্গামাটি প্রভৃতি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ করতে দেখা যায়।

যদিও কাঁঠালের কোনও সুনির্দিষ্ট জাত নেই, তথাপি সাধারণভাবে দুধরনের কাঁঠাল দেখা যায়। খাজা এবং গিলা। খাজা জাতীয় কাঁঠালের গা অধিক মসৃণ এবং পাকা অবস্থায় ও বর্ণ সবুজ থাকে। কোষ বা কোয়াগুলো বড় এবং শুকনো ধরনের হয়। গিলা জাতীয় কাঁঠালের গায়ে খোঁচা খোঁচা কাঁটা থাকে। কাঁঠালের বড় গাঢ় লালচে হয়। কোষ ক্ষুদ্র, মোলায়েম এবং মিষ্টি হয়ে থাকে।

কাঁঠাল গাছ উচ্চতায় প্রায় ২০ মিটার হয়। গাছের ছাল পুরু, ধূসর। গাছে সাদা দুধের মতো আঠা আছে, পাতা ১০১২ সে.মি. লম্বা হয়। সরু ডালে পাতার কক্ষে সাধারণত পুরুষ ফুল হয়, গুঁড়ি ও পুরনো ডালে প্রধানত স্ত্রী ফুল বেশি হয়। পাকা ফলে থাকে জলীয় অংশ ৭৭.%, প্রোটিন ১.%, স্নেহ ০.%, খনিজ ০.%, আঁশ ১.%, শর্করা ১৮.%, খনিজের মধ্যে ক্যালসিয়াম ০.০২%, ফসফরাস ০.০৩% ও লৌহ ০.%

উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কাঁঠালের জন্য উপযোগী। শুকনো ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে না। গরম জায়গা যেখানে বৃষ্টিপাত বেশি সেখানে ফলন বেশি হয়। সব ধরনের মাটিতে কাঁঠাল চাষ করা যায়। তবে শক্ত ধরনের উর্বর মাটি বেশি পছন্দ। ভাল ফলনের জন্য প্রচুর পানি দরকার ঠিকই কিন্তু এরা মাটিতে পানি জমা একদম সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় পানি জমলে কাঁঠাল গাছ মরে যায় । বীজ থেকে খুব সহজেই চারা জন্মায় । বংশ বিস্তারের জন্য এটিই সহজ পদ্ধতি ।

গাছে খুব বেশি ফল ধরলে কিছু ফল এঁচোড় বা সবজি খাবার জন্য কেটে নেয়া ভাল । এতে বাকি ফলের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। পুষ্ট ফল বোঁটা সমেত পেড়ে ঘরের গরম জায়গায় রেখে দিলে ৪৭ দিনের মধ্যে পেকে যায়। কাঁঠালের উন্নত জাত হল সিঙ্গাপুর ও মায়ানমার ।

বীজের গাছে ৭/৮ বছরে ফলন শুরু হয়। সিঙ্গাপুরী জাত ২/৩ বছর থেকেই ফলন দেয়। প্রতি গাছে গড়ে ৩৫১৭৫ কেজি ফলন হয়। সবচেয়ে বেশি ফলন ৩৫০ কেজি হতে পারে। গাছে গড়ে ফল ধরে ২০টি। কাঁচা ফল থেকে টক আচার করা যায়। পাকা ফলের কোয়া থেকে রস, সিরাপ, জেলি, ক্যাণ্ডি করে সংরক্ষণ করা যায় ।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২৬২ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষ হয় এবং বৎসরে প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কাঁঠাল জন্মে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলাল পাহাড়ের গুহা
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে আগুনে পুড়ল তিন বসতঘর