বাংলা সাহিত্যে এক ব্যতিক্রমী ধারার রূপকার সৈয়দ মুজতবা আলী। সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর ছিল স্বচ্ছন্দ ও সফল বিচরণ। উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, সাহিত্য সমালোচনা, প্রবন্ধ – সব মিলিয়ে তাঁর বিপুল রচনাসম্ভারের মধ্যে মার্জিত রুচিবোধ, বুদ্ধিদীপ্ত ও সরস মন এবং অসাধারণ পাণ্ডিত্যের পরিচয় মেলে।
সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্ম ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আসামের করিমগঞ্জে। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন ১৯২১ সালে দেশাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। সে বছরই তিনি চলে যান শান্তিনিকেতনে। এখানকার শান্ত, শ্যামল আর বিদগ্ধ পরিবেশে প্রথিতযশা মনীষীদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান তিনি, পান রবীঠাকুরের নিবিড় সাহচর্য। সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবনে শান্তিনিকেতন পর্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীসময়ে তিনি জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি-এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষার উদ্দেশ্যে মুজতবা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, শিখেছেন বহু ভাষা। সেই সাথে নানা জাতির, নানা ভাষাভাষী বিচিত্র সব মানুষের জীবনাচরণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। এইসব অভিজ্ঞতাই তাঁর রচনাবলিতে সর্বাতিশায়ী। সৈয়দ মুজতবা আলীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে : ‘দেশে বিদেশে’, ‘চাচাকাহিনি’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’, ‘শবনম’, ‘জলে-ডাঙ্গায়’, ‘তুলনাহীনা’, ‘শহর-ইয়ার’ প্রভৃতি। মুজতবার কোনো কোনো রচনায় লোকসংস্কৃতির উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়।
উপন্যাস ‘তুলনাহীনা’ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে রচিত। ভাষাতত্ত্ব ও ধর্মতত্ত্বে ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। ছিলেন বহুভাষাবিদ – প্রায় পনেরোটির মতো ভাষা জানতেন। কর্মজীবনে অধ্যাপনা করেছেন, যুক্ত ছিলেন সরকারি-বেসরকারি উচ্চপদস্থ পদে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি কলকাতা থেকে ঢাকা চলে আসেন এবং এখানেই স্থায়ী হন। ১৯৭৪ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মুজতবা আলী প্রয়াত হন।