চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সাগর উত্তাল থাকায় মাদার ভ্যাসেলগুলোর পাশে ভিড়তে পারছে না কোনো লাইটারেজ জাহাজ। বিশ লাখ টনেরও বেশি পণ্য বোঝাই ৪৪টি মাদার ভ্যাসেল অপেক্ষা করছে। এসব জাহাজের বিপরীতে আমদানিকারকদের দৈনিক আট কোটিরও বেশি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত এসব জাহাজে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। এদিকে, বহির্নোঙরের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কর্ণফুলী নদীতে অলস জাহাজের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। এতে করে এই সেক্টরেও ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় কোনো জাহাজে কাজ হচ্ছে না। পণ্য খালাসের জন্য লাইটারেজ জাহাজ বড় জাহাজের পাশে নোঙর করতে পারছে না। এই অবস্থায় বহির্নোঙরে যাওয়া লাইটারেজ জাহাজগুলো মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস না করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী ৪৪টি মাদার ভ্যাসেল অলস বসে আছে। একই সাথে বহির্নোঙরে যাওয়া পঞ্চাশটির মতো লাইটারেজ জাহাজও অলস অবস্থায় রয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে অলস লাইটারেজ জাহাজের সংখ্যাও তিনশর বেশি। এর ফলে খোলা পণ্য আমদানি খাতে ক্ষতি হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ ফরিদ আহমেদ আজাদীকে জানান, রোববার সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্তত আরো দুদিন সাগরের এই অবস্থা থাকবে। লাইটারেজ জাহাজের একজন মাস্টার গতকাল আজাদীকে বলেন, তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত বড় কথা নয়। এই ধরনের সংকেত বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে। কিন্তু সাগর যেভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে তা অস্বাভাবিক।
বহির্নোঙরে ৪৪টি লাইটারেজ জাহাজে ডাল, তেল, চিনি, পাথর, ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের বিশ লাখ টনেরও বেশি পণ্য রয়েছে জানিয়ে একজন আমদানিকারক বলেন, মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস ব্যাহত হওয়ায় আমাদের লাখ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। আমদানিকারকদের এই গচ্ছা দিতে হলেও কার্যত এর যোগান দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের। একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকলে অন্তত ২০ হাজার ডলার (প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা) ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ আমদানিকারককে পরিশোধ করতে হয়। বহির্নোঙরে অলস বসে থাকা জাহাজগুলোর বিপরীতে প্রতিদিন অন্তত ৮ কোটি টাকা আমদানিকারকদের গচ্ছা দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিদিন বহির্নোঙরে অলস জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণও।
চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, আমরা যত দ্রুত পণ্য খালাস করে জাহাজ বিদায় করে দিতে পারি ততই আমাদের লাভ। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়। বন্দরের ভিতরে বা বাইরে বড় কথা নয়, জাহাজ অলস বসে থাকলেই আমাদের ক্ষতি। বহির্নোঙরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় এখন আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি। বিষয়টি প্রাকৃতিক এবং এতে কারো হাত নেই।
লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) তত্ত্বাবধানে জাহাজগুলো চলাচল করে। বহির্নোঙরে অবস্থানকারী জাহাজগুলোর বিপরীতে প্রতিদিন আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা বার্থিং মিটিং করে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ করার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গতকাল শুধুমাত্র একটি মাদার ভ্যাসেলের জন্য একটি লাইটারেজ জাহাজের আবেদন করা হয়েছে। তাও একটি পাথর বোঝাই জাহাজ। এমভি ডিডি ভয়েজার নামের এই মাদার ভ্যাসেলটির জন্য এমভি প্রিন্স অফ সীমান্ত-১ নামের একটি লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ নেওয়া হয়। তবে গত রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এমভি প্রিন্স অফ সীমান্ত ভিড়তে পারেনি এমভি ডিডি ভয়েজারের কাছে। সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত মাদার ভ্যাসেলের কাছে কোনো লাইটারেজ জাহাজের ভিড়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বহির্নোঙরে অবস্থানকারী একজন মাস্টার।
ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ বলেন, বহির্নোঙরে কোনো জাহাজ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। সাগর উত্তাল। সাগর স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অবস্থা এমন থাকবে। তিনি জানান, কর্ণফুলী নদীতে তিন শতাধিক লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে আছে।