চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে দেখা দেয়া জাহাজ জট সামলাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানিকারকরা বিদেশি মাদার ভ্যাসেলের ক্ষতি কাটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গচ্ছা সামলানোর জন্য লাইটারেজ জাহাজ নির্ভরতা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে বেশি লাইটারেজ জাহাজ গতকাল সোমবার বহির্নোঙরে পণ্য খালাস করতে গেছে। গতকাল সকালের বার্থিং মিটিংয়ে ৬৭টি লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বহির্নোঙরের জট সামলিয়ে দেশের আমদানি বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা রক্ষা করার উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং জেটির ওভার সাইট থেকে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট ক্লিংকার এবং পাথর ছাড়াও গম, র-সুগার, সরিষা, সারসহ বছরে প্রায় আট কোটি টনের বেশি পণ্য লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম সিইউএফএল এবং কাফকোর উৎপাদিত সারের একটি বড় অংশও একইভাবে পরিবাহিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বন্দর চ্যানেলের নানা ঘাট এবং ঢাকা, মিরপুর, নগরবাড়ী, বাঘাবাড়ী, নোয়াপাড়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব জাহাজ পণ্য পরিবহন করে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় দুই হাজার লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের স্বাভাবিক চলাচলের উপর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ দেশের পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক পুরোপুরি নির্ভর করে। নির্ভর করে বহির্নোঙরের জট পরিস্থিতিও। বিশ্বের নানা দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য সময়মতো খালাস করা না গেলে বহির্নোঙরে জাহাজের অবস্থানকাল বেড়ে যায়। বেড়ে যায় জটও। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চারদিনের মতো বন্ধ থাকে বহির্নোঙরের সব কার্যক্রম। বহির্নোঙরে অপেক্ষমান জাহাজের সংখ্যা বেড়ে ৫০টিতে ঠেকেছে। আরো জাহাজ আসছে। আমদানিকৃত লাখ লাখ টন পণ্য নিয়ে অলস বসে থাকা প্রতিটি জাহাজের বিপরীতে লাখ লাখ টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে দেশের আমদানিকারকদের। একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকলেও ফিঙড অপারেটিং কস্ট বাবদ অন্তত বিশ হাজার ডলার গচ্ছা দিতে হয়। বহির্নোঙরে অপেক্ষমান অন্তত ৫০টি জাহাজের বিপরীতে দৈনিক আট কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্ছা দেয়ার পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি বিদেশি মাদার ভ্যাসেলগুলো থেকে পণ্য খালাস সম্পন্ন করা যাবে ততই কমানো যাবে ক্ষতির পরিমাণ। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে লাইটারেজ জাহাজ। এতে গত দুদিন লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ বেড়ে গেছে। গত রোববার ৪৮টি লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। গতকাল লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৬৭টি। সাম্প্রতিক সময়ে একই দিনে ৬৭টি জাহাজ বরাদ্দের রেকর্ড নেই। মাদার ভ্যাসেল ফ্রি করার জন্যই লাইটারেজ জাহাজ বেশি বরাদ্দ নেয়া হচ্ছে বলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রধান নির্বাহী মাহবুব রশীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে কিছু সংকট হয়েছিল। পরে সাগর উত্তাল হয়ে উঠায়ও সংকট হয়। এখন পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। সব ঘাটেই পণ্য খালাস হচ্ছে। বহির্নোঙরে কাজের গতি এসেছে। অপেক্ষমান জাহাজগুলো থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করার চেষ্টা চলছে। এজন্য লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমদানিকারকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বরাদ্দ বাড়িয়েছি। এতে বহির্নোঙরে দেখা দেয়া জট পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পাশাপাশি আমদানিকারকদের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুব রশীদ।