বসন্তের রং, বইয়ের সঙ্গে প্রেম

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতির বুকে রঙ ছড়াচ্ছে বসন্ত। ফাগুনের আগমনে নগরজুড়ে বইছে উৎসবের বন্যা। যার ঢেউ আছড়ে পড়বে বইমেলায়ও। এমন দিনেই আবার ভালোবাসা দিবস। যে দিবস উসকে দেয় মনের রঙ। বসন্ত ও ভালোবাসার রঙ মিলেমিশে একাকার হয়ে আরো বর্ণিল হবে নগরী। যা উজ্জ্বল করবে বইমেলাও। এমন দিনেই সবার প্রত্যাশা, প্রেম কেবল প্রেয়সীর সঙ্গে না। প্রেম হোক বইয়ের সঙ্গেও।

বসন্ত আবাহনের বর্ণিল আয়োজনে গতকাল ব্যস্ত ছিল নগরবাসী। বাদ পড়েনি বইমেলা প্রাঙ্গণও। বসন্ত সাজে এদিনও মেলায় হাজির হয়েছেন অনেকে। পাঠক, দর্শনার্থী, লেখক, প্রকাশক সবার আলোচনায় ঘুরেফিরে এসেছে বসন্ত ও ভালোবাসা। মেলায় স্টল দেয়া প্রকাশকদের বিশ্বাস, উৎসবের দিনে (আজ) বইমেলা হবে আরো জমজমাট। বইমেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকেও গতকাল বার বার মাইকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল, মঙ্গলবার (আজ) বইমেলার মঞ্চে থাকবে বসন্ত উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন। উৎসবে শামিল হওয়ার আহবান ছিল এ ঘোষণায়।

এদিকে গতকালও মেলায় পাঠকদর্শনার্থীর প্রচুর উপস্থিতি ছিল। তবে বিকিকিনি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেননি প্রকাশকরা। বাতিঘর প্রকাশন এর বিক্রয়কর্মী বাবলু চৌধুরী আজাদীকে বলেন, গতবারের চেয়ে সাড়া কম। এবার উপন্যাসের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

চন্দবিন্দু প্রকাশন এর স্বত্ত্বাধিকারী ফাহাদ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ৪৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সবগুলো চলে আসছে। প্রকাশিত বইয়ের বেশিরভাগ কবিতার। তিনি বলেন, এবার লোকজন কম আসছে। একই জায়গায় চার বছর মেলা হচ্ছে, এরপরও মানুষ মেলার খবর জানবে না তা হতে পারে না।

রাউজান থেকে মেলায় আসা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (সমন্বয়) রাশেদ পারভেজ আজাদীকে বলেন, মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। জনসমাগম ভালো হয়েছে। ব্যবস্থাপনাও গোছানো। কিন্তু বইমেলা সত্যিকারের আবহটা এখানে অনুপস্থিত। মনে হচ্ছে সবাই ঘুরতে এসেছে। মেলায় মানসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থার স্টল কম। ভালো মানের লেখকের বইও তুলনামূলক কম। নামী লেখকদের আনাগোনাও নেই। হয়তো ঢাকার বইমেলার প্রভাব পড়েছে। একইসময়ে দুই স্থানে বইমেলার আয়োজন হওয়াতে এমন সমস্যা হতে পারে। এ সংকট থেকে উত্তোরণে ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বইমেলার আয়োজন করা যেতে পারে। কবি আদিত্য টিটু আজাদীকে বলেন, প্রচারণা কম। মিডিয়ায় যতটুকু আসছে এর বাইরে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সেভাবে প্রচারণা হচ্ছে না। প্রথম দুইদিনও লোকজন কম ছিল, পরে বাড়বে মনে করেছিলাম। কিন্তু প্রতিদিনই একই অবস্থা।

নতুন বইয়ের খবর : মেলায় আসা নতুন বইগুলোর মধ্যে যেগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হরিশংকর জলদাস এর উপন্যাস ‘১৬/১৭ লাভ লেন’, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে প্রকাশিত কবি ওমর কায়সার এর ‘ঋতুচক্র থেমে গেলে’, কথা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত থেকে জয়নুল টিটো এর গল্পগ্রন্থ ‘খয়েরি কৌটোয় নীল বোতাম’, প্র প্রকাশন থেকে প্রকাশিত মাইনুল এইচ সিরাজী এর কিশোর থ্রিলার ‘বাসার স্যারের বাকি রহস্য’ উল্লেখযোগ্য।

হরিশংকর জলদাসের ‘১৬/১৭ লাভ লেন’ এর ফ্ল্যাপে লেখা হয়, নাম দেখে মনে হবে, এ বুঝি এক প্রেমের উপন্যাস। আসলে এটি এক অপ্রেমের বৃত্তান্ত। বাদামিজীবন আমাদের। এক খোসার ভেতর দুটো আলাদা ঘরে দুটো বাদাম। আমাদের দাম্পত্যজীবনও ঠিক বাদামের মতন। এক ঘরে এক বিছানায় শুয়েও আলাদা জীবন আমাদের। কাকে যেন পাওয়ার ছিল, কে যেন অধরা থেকে গেল! তিশা সিরাজের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, পারেনি। লম্বা বেঢপ চেহারার নিখিল ভৌমিকের সঙ্গে রূপসী তিশাকে সংসার করতে হলো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল জয়দীপ। দাম্পত্যজীবনটা সুখকর ছিল না। এই উপন্যাসের শরীরজুড়ে না পাওয়ার ক্ষতচিহ্ন। স্নিগ্ধমধুর এক স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে ‘১৬/১৭ লাভ লেনে’।

ওমর কায়সারের ‘ঋতুচক্র থেমে গেলে’ এর ফ্ল্যাপে লেখা হয়, পৃথিবী যেখানে থেমে যায়, সেখানেই নতুন কবিতার জন্ম। কারণ অমোঘ নিয়তির বাইরে নতুন এক ইশারার সন্ধান তো কবিতাই দিতে পারে। কবিতার জন্যই স্বপ্ন টিকে থাকে, প্রজন্মান্তরে তা বাহিতও হয়। ঋতুচক্র থেমে গেলে স্মৃতির বরফে ঢেকে যায় চরাচর। কবিতা সেখানে উষ্ণ প্রস্রবণের মতো। বরফের মাঝে ফুল হয়ে ফুটে ওঠে। ওমর কায়সারের নবম কাব্যগ্রন্থ ‘ঋতুচক্র থেমে গেলে’ পড়তে পড়তে মনে হবে ‘রোদের অধিক কিছু মায়া এখনো শরীরে শুয়ে আছে।’ কবিতার পাঠক কমে গেছে বলে আক্ষেপ যাদের, তাদের জন্য ওমর কায়সার তার নতুন বিস্ময়লিপির সন্ধান দিয়ে গেছেন।’

জয়নুল টিটো’র ‘খয়েরি কৌটোয় নীল বোতাম’ এর ফ্ল্যাপে লেখা হয়, আমরা প্রত্যেকেই মূলত একেকটি গল্প। বস্তুত আমরা গল্পের ভেতর দিয়েই যাওয়াআসা করি। গল্প বলি, গল্প শুনি আবার মনের অজান্তেই কখনো কখনো গল্প হয়ে উঠি। এ গল্প স্বপ্ন ছোঁয়ার কিংবা স্বপ্ন ছুঁতে না পারার। ঈর্ষার। একলা দুপুরে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরা হুহু করা বোবা কান্নার। এ গল্প হয়তো ভালোবাসার নয়তো ভালোবাসা খুঁজে খুঁজে খ্যাপা আর হয়রান হয়ে ভালোবাসাহীন বেঁচেবর্তে থাকার। বইয়ের দশটি গল্পই যাপিতজীবনের। এগুলো ঠিক গল্প হয়ে উঠেছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। আমি জানি, এসব আমার আশপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা। বলা যায়, এ ঘটনাপ্রবাহ আমাকে আলোড়িত করতে পেরেছে। আর আমি চেয়েছি গল্পের ঢঙে আপনাকে বলি। শোনাই। পাঠশেষে আপনার মনে হলেও হতে পারে, গল্পগুলোর কোনো না কোনোটি আপনার অভিজ্ঞতার কাছাকাছি। হয়তো মনের অজান্তেই চোখের কোণে জমা হতে পারে অশ্রুকণা। ক্রোধ কিংবা ভোরের স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়ার মতো ফুরফুরে মিষ্টি অনুভূতি ছুঁয়ে যেতে পারে মন’।

মাইনুল এইচ সিরাজীর ‘বাসার স্যারের বাকি রহস্য’ এর ফ্ল্যাপে লেখা হয়, ‘সাগরিয়া গ্রামে ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা। বাসার স্যার নেমে পড়লেন রহস্য উদ্ঘাটনে। সঙ্গে কয়েকজন দুরন্ত কিশোর। রহস্যের জগতে প্রবেশ করে কিশোরের দল বুঝতে পারে, কিছু ঘটনা লৌকিক, কিছুবা অলৌকিক। কিন্তু রহস্য ভেদ করতে আসা বাসার স্যার নিজেই যখন রহস্যময় হয়ে ওঠেন, পিলে চমকে যায় তাদের। একদিকে কবর থেকে সদ্য উঠে আসা মফিজুল হক কিংবা তালগাছের আগায় চড়ে বসা চড়বাবা অথবা ঠিক মাঝদুপুরে টংদোকানদারের ধাতবরূপ তর্জনীহেলন, অন্যদিকে বাসার স্যারের হেঁয়ালিপূর্ণ ভাবসাবকিশোরের দল খাবি খেতে খেতেও নাক তুলে শ্বাস নেয়। অতঃপর গা ঝাড়া দিয়ে উঠে আসে তারা। বাসার স্যারকে সঙ্গে নিয়েই সাগরিয়া গ্রামে ফিরিয়ে আনে অসাধারণ এক আনন্দময় আবহ’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৫ বছর পর দূর হলো বাধা
পরবর্তী নিবন্ধজরায়ুমুখের ক্যান্সার রোধে সেপ্টেম্বর থেকে টিকা দেওয়া হবে