সিলেট টেস্টের প্রথম দিন চড়ি ঘুরিয়েছিল জিম্বাবুয়ের বোলাররা। কিন্তু দিনের বাকি সময়ে বাংলাদেশের বোলাররা পারেনি জিম্বাবুয়ে ব্যাটারদের পরীক্ষায় ফেলতে। তবে গতকাল ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে ঠিকই ঘুরে দাড়িয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা। বিশেষ করে দিনের শুরুতে পেসার নাহিদ রানার পর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ বল হাতে শাসন করেছেন জিম্বাবুয়ে ব্যাটারদের। অথচ দলের প্রধান স্পিনার তাইজুল ইসলাম হয়ে রইলেন নিজের ছায়া হয়ে। পেলেননা একটি উইকেটও। কিন্তু মিরাজ যেন সে অভাবটা অনুভুত হতে দিলেননা। যদিও একটি উইকেট পেতে পারতেন তাইজুল। কিন্তু স্লিপে যেভাবে সাদমান ইসলামের হাত থেকে ফসকে গেল বল সেটা ছিল তাইজুলের নিয়তি। তবে আরেকদিকে এই উইকেটটা হয়তো লেখা ছিল মিরাজের জন্য। কারন সে উইকেটটি নিয়ে যে নিজের পঞ্চম উইকেট পুরন করেন মিরাজ। মিরাজকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় নিয়াউচির টাইমিংয়ে গড়বড়। ক্যাচ নিলেন সেই তাইজুল। জিম্বাবুয়ের ইনিংস শেষ হলো। মিরাজের ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরেকটি প্রাপ্তি। আরও একবার ৫ উইকেট। বল হাতে নায়ক বনে গেলেন মিরাজ।
জিম্বাবুয়ে যখন পঞ্চম উইকেট হারায়, তখনও কোনো উইকেটের দেখা পাননি মিরাজ। কিন্তু শেষ পাঁচ উইকেট শিকার করলেন তিনি একাই। তার সৌজন্যেই আরও বড় হলো না জিম্বাবুয়ের লিড। এই নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ১১ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই অফ স্পিনার। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে এই কীর্তি বেশি আছে আর কেবল দুজনের। তারা হলেন সাকিব আল হাসান (১৯ বার) ও তাইজুল ইসলাম (১৫ বার)। এই পাঁচ উইকেটে আরও একটি অর্জনে সাকিব–তাইজুলদের সঙ্গী হওয়ার দিকে পাঁচ ধাপ এগিয়ে গেলেন মিরাজ। বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে ২০০ টেস্ট উইকেট হতে তার প্রয়োজন আর পাঁচ উইকেট।
খুব আহামরি বোলিং অবশ্য করেননি মিরাজ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটে স্পিনারদের জন্য সহায়তাও ছিল না তেমন। তবে শুরুটা ভালো করতে না পারলেও পরে মৌলিক কাজগুলি ঠিকঠাক করে গেছেন ২৭ বছর বয়সী স্পিনার। লাইন–লেংথ আঁটসাঁট রেখেছেন। বোলিং ক্রিজ ব্যবহার করা আর গতি বৈচিত্রের চেষ্টা করেছেন। তাতেই মিলেছে উইকেট। আলগা শট খেলে তাকে উইকেট নেওয়ায় সহায়তা করেছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাও। তার পাঁচ উইকেটের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য উইকেট ছিল সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। আর সেই কাঙ্ক্ষিত উইকেটই পেয়েছেন মিরাজ ।
মাত্রই তখন লিড পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। উইকেট বাকি ৫টি। দৃষ্টি তাদের বড় লিডের দিকে। ভরসা তখন শন উইলিয়ামসের ব্যাটে। আগের ছয় টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি করা এই ব্যাটসম্যান গতকালও খেলছিলেন দারুণ। বাংলাদেশের কোনো বোলারই তাকে তেমন কোনো বিপাকে ফেলতে পারছিলেন না। হঠাৎ করেই তিনি হয়ে উঠলেন আত্মঘাতী। আচমকা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করলেন। মিরাজ সেটি বুঝেই একটু ঝুলিয়ে ও টেনে দিলেন বল। ৫৯ রান করা ব্যাটসম্যান ধরা পড়লেন লং অফে। নিয়াশা মায়াভোও দারুণ খেলছিলেন। পেস–স্পিন দুটিতেই বেশ সাবলিল ছিলেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা কিপার–ব্যাটসম্যান। তাকেও ভুলের পথে ঠেলে দেন মিরাজ। ৩৫ রানে সুইপ করার চেষ্টায় উইকেট হারান এই ব্যাটসম্যান। বেশ কিছুক্ষণ একপ্রান্ত আগলে রাখা ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকেও ফেরান মিরাজ। দশে নেমে বেশ যন্ত্রণা দেওয়া ব্লেসিং মুজারাবানির ইনিংস থামে তার বলেই। বেশ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পিং করেন জাকের আলি। সেই চার উইকেটেই তাকে থামতে হতো। যদি তাইজুলের বলে সহজতম ক্যাচটি নিতে পারতেন সাদমান। কিন্তু সেটা হয়নি। মিরাজও পেয়ে গেছেন পাঁচের দেখা। ৮০ ওভার শেষ হতেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। লাল চকচকে বলে জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটটি নিতে মিরাজের লাগে মাত্র দুই বল। জিম্বাবুয়ের লিড থামে ৮২ রানে। তবে মিরাজ না থাকলে লিড তো আরও বেশিও হতে পারত। পাঁচ উইকেট পূর্ণ হতেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ছুটে গিয়ে হাসিমুখে পিঠ চাপড়ে দিলেন তার। তিনি তো জানেন, ম্যাচর প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে মিরাজের এই বোলিং পারফরম্যান্স।