বৃষ্টি পড়ুক আর না পড়ুক, কদম ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয় এ বুঝি বর্ষা এল। কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে মুখর হয় চারিদিক। মেঘের ঘনঘটার পাশাপাশি প্রকৃতিতে ফোটা কদম ফুলে চোখ জুড়িয়ে যায়, সুশোভিত করে তোলে দেহ- মন সারাক্ষণ। দেখতে বলের মত গোলাকার, সবুজ পাতার মাঝে সাদা – হলুদ মেশানো এই ফুল পথচারীদের নজর কাড়ে। পুরো ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও এটি আসলে অসংখ্য ফুলের গুচ্ছ। ঐতিহ্যবাহী এ ফুল গাছ গ্রামবাংলার পথের পাশে নদীর ধারে বেড়ে ওঠে। কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “কদম্ব “থেকে। এর আরেক নাম “নীপ”। মেঘের সঙ্গে মিতালী বলেই হয়তো এর আরেক নাম ” মেঘাগমপ্রিয় “। কদম ফুলের আকর্ষণও কম নয়। বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ নাকি কদমগাছে উঠে বাঁশি বাজিয়ে শ্রীরাধিকাকে আকৃষ্ট করেন। কেউ কেউ এ ফুল সংগ্রহ করে প্রিয়জনকে উপহার দেয়। এ প্রসঙ্গে এক মধুর স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল। এক সময় বর্ষাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশ কদম ফুলের মিষ্টি হাসিতে ভরে থাকত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এ ফুল সংগ্রহ করে ক্যাম্পাসে বিক্রি করত। এক বর্ষণমুখর দিনে স্যার ক্লাসে আসলেন, একহাতে ছাতা আর ব্যাগ, অন্য হাতে এক গুচ্ছ কদম ফুল। আমরা উৎসুক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছি, স্যার কাকে পছন্দ করে এই ফুল দিবেন! যথারীতি স্যার ক্লাস শুরু করলেন। বললেন,”আসার সময় দেখলাম কদম ফুল বিক্রেতার চারিদিকে ছাত্র- ছাত্রীরা জটলা করে আছে। ছেলেরা দিচ্ছে মেয়েকে, মেয়েরা দিচ্ছে ছেলেকে। আমিও তোমাদের ভাবির জন্য নিয়ে নিলাম এক গুচ্ছ কদম।”
বাংলায় কদম নামটি বহুবিধ ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। মানুষের নাম থেকে শুরু করে মিষ্টি, চুলের ছাঁট, জায়গার নাম পর্যন্ত। ঢাকা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের অনেক বড়বড় শহরে জনপ্রিয় একটি স্থানের নাম কদমতলী। মনে হয় কোন একসময় এই সমস্ত জায়গাগুলোতে কদমবন ছিল, কারো কারো রোমান্টিক মুহূর্তের সাক্ষীও ছিল হয়তো। মেয়েরা দলবেঁধে খোঁপায় বৃষ্টি ভেজা কদম ফুল দিয়ে বর্ষা উৎসবে অংশগ্রহণ করত। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গতবছরের মত এবছরও তা আর সম্ভব হচ্ছে না।