লোহাগাড়ায় বর্ষার আগে হাঙর খালের ভাঙনে বাঁধ না দিলে স্মৃতি হয়ে যাবে হাজারো বসতি। উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ফরিয়াদিরকুল থেকে জঙ্গল পদুয়া পর্যন্ত একাধিকস্থানে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বছরের পর বছর খালের পাড় ক্ষয়ে যাচ্ছে, গিলে নিচ্ছে ঘরবাড়ি, জমি আর মানুষের শেকড়। এখন বর্ষার আগে স্থানীয়দের একটাই দাবি– টেকসই বাঁধ নির্মাণ। অন্যথায় হারিয়ে যাবে পুরো গ্রাম। হারিয়ে যাবে হাজারো জীবনের গল্প।
জানা যায়, দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় হাঙর খালের ভাঙন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রতিবছর ভাঙনের আকার বড় হচ্ছে। সামনে বর্ষার আগে ভাঙন এলাকা সংস্কার করা না হলে খালের পানিতে ঘরবাড়ি বিলীন ও ফসলি জমিসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। গত বর্ষায় তীব্র পানির স্রোতে অন্য বছরের চেয়ে ভাঙন বেশি দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বর্ষা আসন্ন। কাগজে–কলমে পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকার আর সময় নেই। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বড় বন্যায় বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। বহু কৃষক জমি ও জীবিকা হারাবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জনস্বার্থের স্থাপনাগুলো ধসে যাবে। পানির ধার ঘেঁষে টিকে থাকা মানুষ আজ শঙ্কিত। হাঙর খালের করাল গ্রাস একের পর এক জমি, ঘরবাড়ি ও পাড় কেড়ে নিয়েছে। এখন একটাই আর্তি কী করে রক্ষা করা যাবে নিজেদের শেষ আশ্রয়, ভিটেমাটি। জরুরি ভিত্তিতে বর্ষার আগে হাঙর খালে চাই বাঁধের সুরক্ষা। এটাই এখন হাঙর খাল পাড়ের হাজারো মানুষের প্রাণের দাবি। শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাঙর খালের ভাঙনে কেউ হারিয়েছে বসতভিটা, কেউ চাষের জমি, আবার কেউ জীবনের সংগ্রামের শেষ সম্বল। হাঙর খালের ভাঙনে যারা আজ নিঃস্ব, তারা চেয়ে আছে একটি বাঁধের দিকে। যা তাদের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয় হতে পারে। হাঙর খালের পাশে রয়েছে খণ্ডখণ্ডভাবে কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস।
কোথাও রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার কোথাও বিস্তৃর্ণ ক্ষেত–খামার। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে ফরিয়াদিকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন। খালের পাড় হারিয়ে ফেলা মানুষ এখন আর আশ্বাস চায় না, চায় বাস্তব কাজ। ভাঙনের আগে, হারানোর আগে সময় থাকতে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক আবদুর রহিম জানান, সামনের বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে হাঙর খালের পানির তোড়ে আরো বড় ভাঙন ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এক সময় যেখানে ধান আর সবজির সবুজ হাসি দেখত গ্রামের মানুষ। আজ সেখানে হাঙর খালের ভাঙন গিলে নিচ্ছে জমি, ঘর আর স্বপ্ন। আবদুর রহিমের মতো শত শত কৃষকের একটাই চাওয়া বর্ষার আগে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ হোক, হারিয়ে যাওয়া জীবন ফিরে আসুক। আমাদের ভিটেমাটি ও ফসলি জমি রক্ষা করো।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর বর্ষায় একটু একটু করে যখন নিজ চোখের সামনে ভেঙে যাচ্ছে ভিটেমাটি, তখন স্থানীয়দের বুকের ভেতর চাপা পড়ে থাকে অজানা এক ভয়। খালের ভাঙন এখন আর শুধু প্রাকৃতিক পরিবর্তন নয়। এটি হয়ে উঠেছে বেঁচে থাকার সংকট। এই সংকট থেকে মুক্তি চান খালপাড়ের মানুষ। দ্রুত ভাঙনরোধ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা না হলে বর্ষায় খালের পানি লোকালয়ে ঢুকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকাসহ পদুয়া বাজার পর্যন্ত প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এহসান সিকদার জানান, হাঙর খালের একাধিকস্থানে ভাঙনে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে পুরো জনপদ। গ্রাম হারানোর আতঙ্কে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, শঙ্কিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও। বর্ষার আগে খালের ভাঙন রোধে দ্রুত ও টেকসই উদ্যোগ না নিলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্ষা শুরু হলে পুরো গ্রাম ভেঙে খালে বিলীন হতে সময় লাগবে না। তখন শুধু আফসোস করা ছাড়া আর করার কিছুই থাকবে না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, ইতোমধ্যে পরিদর্শন শেষে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিমাপ করা হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ না পেলেও বোর্ডের অনুমতি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত কাজ শুরু করা হবে।