আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তিনি বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাতায়াত করা যাবে। এটি রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় অর্জন। গত শনিবার দোহাজারী রেল স্টেশন চত্বরে ডেমু ট্রেন উদ্বোধন করার সময় তিনি এ কথা বলেছেন।
দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত পৃথক সংবাদে বলা হয়, বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম-কঙবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। তবে কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও ৬ মাস বেশি লাগবে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, প্রকল্পের চট্টগ্রাম অংশে রাস্তা ভরাটের জন্য মাটির সংকট প্রকট। বিশেষ করে সাতকানিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় কোথাও মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এখন শঙ্খ নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করে রাস্তা ভরাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, সব মিলে এখন পর্যন্ত মোট প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের ৩৯টি সেতুর মধ্যে অনেক সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অনেক সেতুর কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। প্রকল্প পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজের জন্য ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলের চুক্তি হয়। কিন্তু জমি পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজও দেরিতে শুরু হয়।
এখানে উল্লেখ্য, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে ২০১০ সালে এই নতুন রেলপথ স্থাপনের জন্য সরকার ওই বছরের ৬ জুলাই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন দেয়। এরপর ২০২১ সালের ১৯ জুলাই প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। ওই সময়ই প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত স্থির করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন চিত্রটির বর্ণনা পাই পত্রিকান্তরে প্রকাশিত নিবন্ধে। তাতে দেয়া যায়: আমাদের আকাশপথে কেবল যাত্রী পরিবহনের কাজটি হয়ে থাকে। তবে তা অত্যন্ত সীমিত আকারে। তাছাড়া এটি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল, সাধারণ মানুষের আয়ত্তে নয়। আমাদের নদীপথের মোট দূরত্ব বর্ষাকালে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার এবং শুষ্ক মৌসুমে মাত্র ৪ হাজার কিলোমিটার। নদীপথ ব্যবহার করতে হলে ভৌগোলিক সুবিধা থাকা প্রয়োজন। সব অঞ্চলকে নদী ব্যবহারের আওতায় আনা যাবে না। তৃতীয় বিকল্পটি হল সড়কপথ। আমাদের দেশে ব্যবহার উপযোগী সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার। আমাদের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কপথে যে চাপ রয়েছে, তা সইবার মতো ক্ষমতা সড়ক কাঠামোতে নেই। ফলে দিন দিন সড়কপথে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। শেষ যে বিকল্পটি তা হল রেলপথ। আমাদের দেশে রেলের মোট দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার। পরিবহন খরচ ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নেয়া হলে সবচেয়ে পছন্দের বিকল্পটি নিশ্চয়ই রেলপথই হবে। আর সেটি একটি আরামদায়ক ও স্বস্তিকর যাত্রাও বটে। তাই রেলপথের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন খুবই জরুরি।
নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে আরও ৬ মাস বেশি লাগার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংবাদে। বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম অংশের মধ্যে সাতকানিয়া থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার অংশে মাটির সংকট বেশি। মাটির সংকটের কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। করোনার কারণে ৫-৬ মাস কাজ বন্ধ ছিল। এখন বিআইডব্লিউটিসির সাথে কথা হয়েছে। তারা ড্রেজার এনে সাঙ্গু থেকে বালি উত্তোলন করবে। এই বালি কিনে এনে রাস্তা ভরাট করা হবে। আশার কথা, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। এই কারণে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে চায় রেল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে খুলে যাবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার, পাল্টে যাবে এখানকার অর্থনৈতিক চিত্র, আমূল পরিবর্তন ঘটবে যোগাযোগ ব্যবস্থার। আমরা চাই, বর্ধিত মেয়াদের মধ্যেই যেন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।