প্রথমেই বলতে হয় বয়ঃসন্ধিকাল কী? বয়ঃসন্ধি হলো মানব জীবনের সেই পর্যায়, যখন একটি শিশু শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণ করে। সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধি কাল শুরু হয়। এ সময় ছেলে মেয়ে উভয়ের মধ্যে নানা শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন হয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন দ্রুত লম্বা হওয়া, ত্বক তৈলাক্ত হওয়া, ব্রণ উঠা ইত্যাদি। শরীরের ওজন ও বৃদ্ধি পায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে গলার স্বরের পরিবর্তন হয়, মাংসপেশি সুগঠিত হয় এবং দাড়ি, গোঁফ গজাতে শুরু করে। মেয়েদের অনেকেরই মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হয়। বয়ঃসন্ধিকালে আমাদের কিশোর কিশোরীরা স্বাভাবিকভাবে খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। অনেক কিছু নিয়ে তাদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তাদের চিন্তা–ভাবনা, ভালোলাগা ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়। অনেকেই অল্পতে হতাশ হয়ে পড়ে। বয়ঃসন্ধিকাল সম্পর্কে আমাদের অভিভাবক মহলে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় আমরা তখন আমাদের কিশোর–কিশোরী সন্তানদের অনেক আচরণকে ঔদ্ধত্য বা অস্বাভাবিক মনে করি। আবার অনেক অভিভাবক ভাবে কিশোর–কিশোরী সন্তানকে এ সময় কঠোর শাসনে রাখা উচিত। কিন্তু তা মোটেও ঠিক নয়। এ সময় কিশোর–কিশোরীরা তাদের শারীরিক পরিবর্তনগুলো দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে তাদের মধ্যে মুড সুইং অর্থাৎ হঠাৎ হতাশা বা কোনও বিষয়ে অতি উৎসাহিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের সাথে ভালোবাসাপূর্ণ আচরণ করা। যে কোনো কাজের সঠিক ও ভুল দিকগুলো বুঝিয়ে দেওয়া। এ সময় মা–বাবা বা অভিভাবকদের আচরণ হবে খুবই বন্ধুসুলভ। কিশোর কিশোরীদের বোঝাতে হবে, এ সময়টা সবার জীবনে আসে। এই পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক। তাই বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীরা যেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে মা, বাবা, শিক্ষক বা বড় ভাই বোনের সাথে পরামর্শ করে। অভিভাবকদের উচিত সকল কিশোর কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালটা নিরাপদ ও সহজ করা।