বন্যায় হালদা পাড়ের আশপাশের সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন গুলো প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে হালদা নদীও। বন্যার কারনে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর কার্প জাতীয় মাছ (রুই, কাতাল, কালিবাইশ ও মৃগেল) ছড়িয়ে পড়েছে খাল–বিলে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের আশংকা হালদাসহ আশপাশের সমস্ত জলাশয় নিমজ্জিত হওয়ায় হালদার বড় মাছ বেরিয়ে গেছে। হালদার ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের মাছ গুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলার খাল–বিল পুকুরে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার চাষীদের মৎস্য খামারের মাছ হালদায় এসে ঢুকেছে। এর ফলে হালদার কার্প জাতীয় মাছের জিনগত বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে না।
জেলা এবং উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের বন্যায় চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলার মৎস্য চাষের পুকুর, দিঘী, মৎস্য হ্যাচারির মাছ ভেসে গেছে। এতে শত শত মৎস্য খামারির কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে কিভাবে উঠবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ছোট–বড় মৎস্য খামারিরা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ আজাদীকে বলেন, বন্যায় হালদাসহ আশপাশের সকল ইউনিয়ন গুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে হালদার বড় বড় মাছ বেরিয়ে গেছে। আবার খামারিদের চাষের মাছও হালদায় ঢুকেছে। এর ফলে হালদার কার্প জাতীয় মাছের জিনগত বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে না। আগামী বছর হালদার কার্প জাতীয় মাছের পোনা সংকট হবে। হালদার বড় বড় মাছ বেরিয়ে গেলে আগামী বছর এত গুলো পোনা পাবে কোথায়? হালদার পোনার সাথে দেশের অন্য কোন স্থানের পোনা মিলে না। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ২০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ধরা পড়েছে। এগুলো হালদার মাছ। কোনো মৎস্য খামারি কিংবা চাষীদের পুকুরে ২০ কেজি ওজনের মাছ থাকে না। বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, বন্যায় আমাদের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২৯০ কোটি টাকার মৎস্য চাষের (অবকাঠামোসহ) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় চট্টগ্রামে মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মীরসরাই উপজেলায়। মীরসরাইয়ে চাষীদের দাবি তাদের ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আমাদের হিসেব অনুযায়ী ক্ষতি হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা। মীরসরাইয়ের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলায় প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলায় বানের পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মাছ। রাউজান–সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্ন উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য এ্যাকশন প্লান করা হবে। যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের মাঝে আমরা পোনা বিতরণ করব।