দেশের বিভিন্ন জেলায় গত এক সপ্তাহের অবিরাম বৃষ্টিতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার বেশ কিছু এলাকা ও কক্সবাজার জেলার অতিবৃষ্টিজনিত দুর্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার বন্যা। বলা যায় এসব এলাকার মানুষ এখন দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফেনী ও কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলরত আন্তনগরসহ সব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস এবং সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বন্যার কারণে ট্রেনগুলো গন্তব্যে যেতে পারেননি। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে। অনেক জায়গায় রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি চলাচল করছে। আর বন্যার পানিতে কুমিল্লায় রেললাইন উপড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফেনী স্টেশনে বন্যার পানি জমে রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, জামালপুর, সিলেট ও চাঁদপুরে প্রতিদিন ১১টি আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া কক্সবাজার, নাজিরহাট, চাঁদপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহে লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করে নিয়মিত। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বলেন, বন্যার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বিশেষ করে ফেনীতে রেললাইন ও রেলসেতুর ওপর দিয়ে পানি চলাচল করছে। একই অবস্থা হয়েছে সিলেটের একটি রেলসেতুতেও। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইনেও পাহাড় ধস হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রেন চালানো খুবই বিপজ্জনক। তাই যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং রেলের সম্পদ রক্ষায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ নদ–নদীর দেশ। বন্যা এ দেশের সাংবার্ষিক এক সমস্যা। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকের দেশ হিসেবে পরিচিত। বছরের পর বছর ধরে আমাদের দেশ নানা ধরনের দুর্যোগ আক্রান্ত হচ্ছে। এক কথায় আমাদের এই দেশ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির নিষ্ঠুর আক্রোশে আক্রান্ত, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বহু দুর্বিপাক দেশের জন্য অতিপরিচিত ধারণা। এসব দুর্বিপাকে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে, দেশের মানবসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়, জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় বেহিসেবি, কোনো কোনো সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দেশ চরম মানবিক বিপর্যয়ে পৌঁছায়।
আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েকটি জেলার কয়েক লাখ মানুষ। বলা হচ্ছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, ফেনী, কুমিল্লায় এই সময়ে এরকম বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই ছিল না আবহাওয়া অধিদপ্তর বা বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের। ফলে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না এসব এলাকার মানুষের।
এ কথা আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ তৎপরতা চালিয়ে যাবে। বিশ্বাস করতে পারি, বন্যার্তদের সাহায্যে সরকার কোনো ধরনের গাফিলতি করবে না। তারপরও বলা জরুরি, বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। যারা এ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের ত্বরিৎকর্মার ওপরে অনেক কিছুই নির্ভরশীল। এবার যে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এতে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে আগেভাবেই সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে– মানুষ যাতে বিশুদ্ধ পানি খাদ্যসহ ত্রাণ সামগ্রীর অভাবে যেনো কোনো কষ্ট না পায়। তাদের যেনো উপোস থাকতে না হয়।
বিশ্লেষকরা বলেন, খাবারের সঙ্গে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হতে পারে তীব্র পানি সংকট। নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সংগঠন পর্যায়ের তৎপরতাও দরকার। দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। বন্যাদুর্গতদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেওয়া এবং শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরি। বিত্তবানদেরও উচিত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মানুষের কাজ। দুর্গত মানুষের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি সম্ভব হয়, এ দুর্যোগ মোকাবেলায় স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সহায়তা নিয়ে বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।